ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আর যুক্তরাষ্ট্রে এসো না: আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ১০ বছরের অভিজ্ঞ মার্কিন শিক্ষকের বিস্ফোরক বার্তা!

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ১৩:৩০, ২৮ মে ২০২৫

আর যুক্তরাষ্ট্রে এসো না: আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ১০ বছরের অভিজ্ঞ মার্কিন শিক্ষকের বিস্ফোরক বার্তা!

যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করা এক অভিজ্ঞ শিক্ষক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সরাসরি সতর্কবার্তা দিয়েছেন: ‘এখানে আর আসবেন না’। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টে তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য আর নিরাপদ কিংবা বাস্তবসম্মত নয়।

এই মন্তব্য এমন এক সময় সামনে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তহবিল কমে যাওয়া, অভিবাসন নীতির কঠোরতা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। এমনকি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানও এর প্রভাব থেকে রেহাই পায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তর সম্প্রতি হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করেছে। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা, ইহুদি-বিরোধী কার্যক্রম এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে কথিত সম্পর্ক। স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা সচিব ক্রিস্টি নোম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অধিকার নয়, এটি একটি সুবিধা। তারা উচ্চ টিউশন ফি দিয়ে যে লাভ এনে দেয়, তা দিয়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল তহবিল আরও স্ফীত হয়।”

এই সিদ্ধান্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। এক মার্কিন শিক্ষক, যিনি কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন, তার উদ্বেগ প্রকাশ করে রেডিটে একটি পোস্ট করেন যা দ্রুত ভাইরাল হয়। 

তিনি লিখেছেন, “আমি সারাজীবন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীদের পড়াতে ভালোবেসেছি। কিন্তু এখন আর মনে করি না, যুক্তরাষ্ট্র তাদের জন্য নিরাপদ কিংবা যুক্তিযুক্ত। হার্ভার্ডে যা হচ্ছে এবং গবেষণা খাতে ব্যাপক কাটছাঁট সবই শুরু মাত্র। এই প্রশাসনের চার মাস হয়েছে, কিন্তু আমি ইতোমধ্যেই ভীত। আমি একজন শ্বেতাঙ্গ, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া নাগরিক হয়েও নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না। আমি এখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

এই পোস্টে বহু প্রতিক্রিয়া আসে। একজন মন্তব্য করেন, “আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। অনেক কিছুই ঘটছে যা তাদের জীবনকে অস্থির করে তুলছে।”

আরেকজন সামান্য ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেন, “হ্যাঁ, বর্তমান প্রশাসন অভিবাসন এবং প্রতিবাদ নীতিতে কড়াকড়ি করছে। কিন্তু তারপরও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উদ্ভাবনী কেন্দ্রগুলোর অন্যতম। কিছু ঘটনা ভীতিকর হলেও, সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা একরকম নয়। ‘এখানে আসবেন না’ বলা একধরনের বিশেষ সুবিধাভোগীদের দৃষ্টিভঙ্গি, যা নিরাপত্তা, সুযোগ কিংবা একাডেমিক স্বাধীনতা খুঁজে ফেরা শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে অগ্রাহ্য করে।”

কেউ কেউ ইতিহাসের দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেছেন। একজন বলেন, “এই দেশের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা সহিংসতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে আছে। সেক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়।”

আরেকজন লেখেন, “ভীতির বাণী ছড়িয়ে কী লাভ? আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে নিজেদের জন্য, আর মানবতার জন্য। এখনই যুক্তরাষ্ট্রকে ছেড়ে দেওয়ার সময় নয়।”

তবে, কেউ কেউ শিক্ষকটির উদ্বেগ সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী লিখেছেন, “ধন্যবাদ, কিন্তু আমি আমার ভাগ্যই গ্রহণ করব। এটি মাত্র দু’বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রাম চোখের পলকে শেষ হয়ে যাবে।”

যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক ও দুশ্চিন্তা এখন তুঙ্গে। রাজনৈতিক কড়াকড়ি, অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ কতটা টিকে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। তবে, এর মধ্যেও কেউ সাহস খুঁজে নিচ্ছেন, কেউবা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় দিশেহারা। এ অবস্থায়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আদৌ এখনও স্বপ্নপূরণের দেশ কি না সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/2bmcdd7n

আফরোজা

×