
ছবি: সংগৃহীত
জাপানে স্থায়ীভাবে বসবাস করার স্বপ্ন অনেকেই দেখে থাকেন। তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে দীর্ঘ অপেক্ষা, জটিল প্রক্রিয়া ও কঠিন শর্ত মানতে হয়—এমনটাই ধারণা অনেকের। তবে সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন কানাডার নাগরিক ও জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর টোকুয়ু। মাত্র দুই বছরে জাপানের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি (PR) পাওয়ার কৌশল শিখিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশীর অনুপ্রেরণা।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে জাপানে সফরে গিয়েছিলেন টোকুয়ু। সঙ্গে ছিলেন তার জাপানি বন্ধু মাইকেল। সেখানকার মানুষের আন্তরিকতা, শৃঙ্খলাবদ্ধ সমাজব্যবস্থা, ট্রেনের সময়নিষ্ঠতা, প্রকৃতি ও এনিমে-সংস্কৃতির প্রেমে পড়ে যান তিনি। কিন্তু বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভাষা। বন্ধু মাইকেলের অনুবাদে নির্ভর করতে হচ্ছিল সবসময়। শিনকানসেনে ফেরার পথে, চোখে পানি নিয়ে টোকুয়ু প্রতিজ্ঞা করেন—তিনি জাপানি ভাষায় দক্ষ হবেন এবং আবার ফিরে আসবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু জাপানি কোর্স করলেও সেগুলো সীমিত পর্যায়েই সহায়তা করে। বাকিটা ছিল সম্পূর্ণ স্বশিক্ষার ওপর নির্ভর। ইউটিউব ভিডিও, ফ্রি অনলাইন গ্রামার গাইড, শব্দতালিকা—যা পেয়েছেন, তাই কাজে লাগিয়েছেন। ‘Kanji Study’ অ্যাপ দিয়ে প্রতিদিন ৫–১০টি নতুন কানজি ও শব্দ শিখতেন। জাপানি পডকাস্ট, জাপানি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে চর্চা—সব মিলিয়ে বছর পাঁচেক পরে তিনি পাশ করেন সবচেয়ে কঠিন JLPT N1 পরীক্ষা।
টোকুয়ু বলেন, “ভাষা না জানলে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয় না।” প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারতেন না, কথাও বুঝতেন না ভালোভাবে। কিন্তু এখন তিনি বন্ধুর কাছে নিজের দুর্বলতাও খুলে বলার সাহস পান, প্রেমে আবেগ প্রকাশ করতে পারেন, এমনকি জিমের কর্মীদের সঙ্গেও মজার গল্প বলেন।
টোকুয়ু জানালেন, সাধারণত জাপানে PR পেতে দশ বছর সময় লাগে, অথবা জাপানি নাগরিককে বিয়ে করতে হয়। তবে তিনি পেয়েছেন Highly Skilled Professional (HSP) নামক পয়েন্ট-ভিত্তিক প্রক্রিয়ায়। এই সিস্টেমে বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বেতন, কাজের অভিজ্ঞতা ও ভাষাজ্ঞান অনুযায়ী পয়েন্ট দেওয়া হয়।
৭০ পয়েন্টে তিন বছরে PR, আর ৮০ পয়েন্টে মাত্র এক বছরেই আবেদন করা যায়। টোকুয়ুর বয়স ছিল কম, ছিল মাস্টার্স ডিগ্রি, ভালো বেতন ও JLPT N1—ফলে তিনি ঠিক ৮০ পয়েন্টে পৌঁছান। আবেদন করার ছয় মাস পরে, জাপানে থাকার দ্বিতীয় বর্ষে তিনি পেয়ে যান PR।
টোকুয়ু বলেন, “এটা শুধু কাগজ নয়—এটা স্বাধীনতা।” আগে কাজ হারালে জাপান ছাড়তে হতো। কিন্তু PR পাওয়ার পর তিনি নিজের চাকরি ছেড়ে পুরো সময় কনটেন্ট তৈরিতে মন দেন। তিনি এখন জাপানের জীবন, সংস্কৃতি ও ভাষা নিয়ে ভিডিও বানান।
টোকুয়ু বলেন, নাগরিকত্ব নিতে হলে কানাডার পাসপোর্ট ছাড়তে হতো, যা তিনি চান না। কারণ PR দিয়েই তিনি যা প্রয়োজন তা পাচ্ছেন—ভিসার ঝামেলা ছাড়াই স্থায়ীভাবে থাকা, জাপানের বাইরে গিয়েও ফিরে আসা ইত্যাদি।
টোকুয়ু বলেন,“ভাষা শেখার সময় ধৈর্য হারাবেন না। এটা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু প্রতিদিন একটু করে শেখা, আগ্রহ ধরে রাখা আর চর্চা চালিয়ে গেলে একদিন আপনি নিজেই নিজেকে অবাক করবেন।”
তিনি বলেন, জাপান যেতে চাইলে ভাষা শেখা সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এটি শুধু চাকরি নয়, সম্পর্ক, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা এবং স্থায়ী বসবাসের পথও সুগম করে।
মুমু