ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্পের শুল্কনীতি স্থগিত, বড় ধাক্কা অর্থনীতিতে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৩৭, ২৯ মে ২০২৫

ট্রাম্পের শুল্কনীতি স্থগিত, বড় ধাক্কা অর্থনীতিতে

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতির একটি প্রধান অংশে এটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ম্যানহাটনভিত্তিক এই আদালত রায়ে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী বিদেশি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের একচ্ছত্র ক্ষমতা কংগ্রেসের, যা জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার উপরে নয়। ট্রাম্প প্রশাসন এই রায় ঘোষণার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপিলের ঘোষণা দিয়েছে।

কে মামলা করেছিল:  এই রায় এসেছে দুটি পৃথক মামলার ভিত্তিতে। নন-পার্টিসান সংগঠন লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার ক্ষুদ্র ব্যবসার পক্ষে একটি মামলা করে, যারা শুল্ক আরোপিত দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানি করে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি রাজ্য সরকারের একটি জোটও এ শুল্কের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ জানায়।

এই মামাগুলোই ট্রাম্পের তথাকথিত "মুক্তির দিন" শুল্কনীতির বিরুদ্ধে প্রথম বড় আইনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত। তিন বিচারকের একটি প্যানেল রায়ে জানায়, ১৯৭৭ সালের আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (IEEPA) প্রেসিডেন্টকে এতটা ব্যাপক শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় না। এছাড়া, চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর আরোপিত পৃথক কিছু শুল্কও আদালত বাতিল করে দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে মাদক ও অবৈধ অভিবাসীর প্রবাহ ঠেকাতে আরোপ করা হয়েছিল। তবে, গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর শুল্ক আদালতের এই রায়ের আওতায় পড়েনি, কারণ এগুলোর ক্ষেত্রে আলাদা আইন প্রযোজ্য।

প্রতিক্রিয়া কী এসেছে: হোয়াইট হাউস এই রায়ের সমালোচনা করেছে, যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো সরাসরি কিছু বলেননি। ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কুশ দেশাই এক বিবৃতিতে বলেন, “জাতীয় জরুরি অবস্থা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সেটা অনির্বাচিত বিচারকদের সিদ্ধান্ত নয়।” নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস, যিনি মামলায় যুক্ত ছিলেন, রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আইন স্পষ্ট: কোনো প্রেসিডেন্টের এককভাবে কর আরোপের অধিকার নেই।” তিনি আরও বলেন, “এই শুল্ক ছিল সাধারণ মানুষের ওপর বিশাল কর বোঝা, যা মূল্যস্ফীতি, ব্যবসার ক্ষতি এবং কর্মসংস্থান হ্রাসের কারণ হতো।” আন্তর্জাতিক বাজার ইতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এশিয়ার শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন দেখা গেছে, মার্কিন ফিউচার বাজারও বেড়েছে এবং ডলার শক্তিশালী হয়েছে ইয়েন ও সুইস ফ্রাঁ-এর তুলনায়।

এরপর কী হবে: হোয়াইট হাউসের হাতে আছে ১০ দিন, এ সময়ের মধ্যে শুল্ক কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, যদিও বেশিরভাগ শুল্ক বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। যদি আপিলে হোয়াইট হাউস ব্যর্থ হয়, তবে মার্কিন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সি (CBP) নতুন নির্দেশনা জারি করবে। তবে আপিল আদালত ট্রাম্পপন্থী হলে ভিন্ন সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

সব আদালত যদি রায় বহাল রাখে, তাহলে যেসব ব্যবসা আগে শুল্ক দিয়েছে, তারা সুদসহ ফেরত পাবেন। SPI অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস বলেন, “এই রায় মার্কেটকে ‘হাফ ছাড়ার’ সুযোগ দিয়েছে। বিচারকদের বার্তা স্পষ্ট ওভাল অফিস কোনো ট্রেডিং ডেস্ক নয়, আর সংবিধান কোনো সাদা চেক নয়।” ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের পল অ্যাশওয়ার্থ বলেন, “এই রায় ট্রাম্প প্রশাসনের দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের প্রচেষ্টাকে বিশৃঙ্খল করে তুলবে।”

ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট : চলতি বছরের ২ এপ্রিল ট্রাম্প অভূতপূর্ব এক বৈশ্বিক শুল্কনীতি ঘোষণা করেন। এতে অধিকাংশ দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের মতো দেশগুলোর ওপর উচ্চ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়। এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সুরক্ষা ও উৎপাদন খাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া হয় বলে ট্রাম্প দাবি করেন। তবে চীনের সঙ্গে টানা বাণিজ্য যুদ্ধ, বারবার শুল্ক পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা সব মিলিয়ে বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একটি আংশিক সমঝোতায় পৌঁছেছে, যার ফলে চীনের ওপর শুল্ক ১৪৫% থেকে কমে ৩০% এবং চীনের পক্ষ থেকেও কিছু মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমানো হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রও পারস্পরিক কম শুল্ক আরোপে একটি চুক্তি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর, ট্রাম্প সেই সময়সীমা এক মাসের বেশি বাড়িয়ে দেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েনের অনুরোধে।

শহীদ

×