
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব রাজনীতিতে মানিকজোড় বন্ধুত্বের সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল ঘোষণার পর দেশটিকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকেই এক দশক থেকে আরেক দশক—সবসময়ই ইসরায়েলের পাশে থেকেছে ওয়াশিংটন। ফিলিস্তিন দখল, যুদ্ধ, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠলেও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বরাবরই থেকেছে ইসরায়েলের পক্ষে।
বিশেষ করে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর নিপীড়নের বিরুদ্ধে যখন বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ তুঙ্গে, তখনও ৫৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানির মধ্যেও নেতানিয়াহুকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে গেছেন বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্টরা।
তবে সম্প্রতি দৃশ্যপটে এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল নিয়ে হাঁটছেন ভিন্ন পথে। গাজায় চলমান যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘এক্সজিও নিউজ’-এর বরাতে জানা গেছে, গাজার সাধারণ মানুষের দুর্দশা দেখে হতাশ হয়েছেন ট্রাম্প এবং তিনি যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু নেতানিয়াহু গাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ চান—ফলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে দুই নেতার মতপার্থক্য।
সম্প্রতি ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলকে এড়িয়ে যাওয়া এবং নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ না করাকে কেন্দ্র করে ‘সম্পর্কে ফাটল ধরেছে’ এমন গুঞ্জন এখন অনেকটাই ‘ওপেন সিক্রেট’। মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দা হিল’-এর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ইসরায়েলকে ব্ল্যাংক চেক দেওয়ার মার্কিন নীতি থেকে সরে আসতে চাইছেন ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসন এখন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের অন্ধ সমর্থক নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মনোভাবের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। প্রথমত, নেতানিয়াহুর যুদ্ধকামিতাকে ট্রাম্প রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত মনে করছেন। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলের ওপর মার্কিন অর্থনীতির নির্ভরতা নেই বললেই চলে। তাই ইসরায়েলের স্বার্থের চেয়ে মার্কিন স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রতি ট্রাম্পের অনীহা নিজ দেশে তাঁর দলের মধ্যেও অসন্তোষ বাড়িয়েছে। আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (AIPAC) দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন কংগ্রেসকে প্রভাবিত করে এলেও, সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে রিপাবলিকানদের মধ্যেও এর বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বাঁধছে।
মধ্যপ্রাচ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ভাবছে—এমনটাই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। আর এই পরিবর্তন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপরও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। গাজা যুদ্ধ থেমে গেলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হ্রাস পেলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী খুব বেশি দিন ক্ষমতায় টিকতে পারবেন না বলেই বিশ্বাস মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর। ‘দা হিল’ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে—নেতানিয়াহুর বহুদিনের গাজা দখলের স্বপ্ন এবার ভেঙে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান বদলের কারণেই।
বিশ্ব রাজনীতির এই নতুন সমীকরণ ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মোড় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
আসিফ