ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইরানে হামলা করা ইসরায়েলের একার পক্ষে অসম্ভব!

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ২৪ মে ২০২৫

ইরানে হামলা করা ইসরায়েলের একার পক্ষে অসম্ভব!

ছ‌বি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। গেল কিছুদিন ধরেই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে— ইসরায়েল কি ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে সরাসরি হামলা চালাবে? তবে এই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। সম্প্রতি সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ইরানের পরমাণু কার্যক্রম ধ্বংস করা ইসরায়েলের একার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

কেরি বলেন, “ইসরায়েল কিছু ক্ষতি হয়তো করতে পারবে, যা বড় ধরণেরও হতে পারে। কিন্তু ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সম্পূর্ণ ধ্বংস করা তাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়।” তিনি আরও হুঁশিয়ার করেন, এমন হামলার ফলে গোটা অঞ্চল বড় ধরনের বিপদের মুখে পড়তে পারে।

এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, কেরির এমন মন্তব্য একদিকে যেমন ইসরায়েলের যুদ্ধংদেহী অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সামরিক ও কূটনৈতিক দৃঢ়তা নতুন এক স্তরে পৌঁছেছে বলেও ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এমন উত্তেজনার মাঝেই রোমে অনুষ্ঠিত হলো ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পঞ্চম দফার পরোক্ষ পরমাণু আলোচনা। এতে ইরানের প্রতিনিধি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অংশ নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আঞ্চলিক দূত স্টিভ উইটক।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই এক্স-এ (সাবেক টুইটার) জানান, আলোচনায় ইরান তার নীতিগত অবস্থান খুবই শক্তভাবে উপস্থাপন করেছে। তিনি আরও জানান, আলোচনা হয়েছে পেশাদার ও শান্ত পরিবেশে। বাঘাইয়ের বক্তব্যে বোঝা যায়, যখন ইসরায়েল প্রকাশ্যে হামলার হুমকি দিচ্ছে, তখন ইরান কূটনৈতিক সৌজন্যের পথেই অটল রয়েছে।

এই আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ওমান। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাঁচ দফার আলোচনার মধ্যেই কিছু বাস্তবসম্মত সমাধানের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, যা বর্তমানে দুই পক্ষই গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওমানের এই মধ্যস্থতা আবারও প্রমাণ করে— ইরান যুদ্ধ নয়, বরং সমঝোতা চায়। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কি শান্তির এই ভাষা বুঝতে ও গ্রহণ করতে আগ্রহী?

জন কেরির মন্তব্যের পর অনেকেই ধারণা করছেন, ইসরায়েলের এই হুমকি হয়তো একটি কৌশল, যার মাধ্যমে তারা ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সত্যিকার অর্থেই একটি সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অথবা, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধের ছায়া তুলে আলোচনা প্রক্রিয়ায় ইরানকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।

তবে বাস্তবতা হলো, ইরান এখন কেবল কূটনীতিতে নয়, সামরিক প্রস্তুতিতেও আত্মবিশ্বাসী। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকরাও তা স্বীকার করছেন। ইরানের পরমাণু ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে বটে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ট্রিগারে কার আঙুল থাকবে— তেহরানের, না তেলআবিব বা ওয়াশিংটনের— তা সময়ই বলে দেবে।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=jGx8m77nTow

এম.কে.

×