ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাকিস্তানকে পুনরায় ‘ধূসর’ তালিকাভুক্ত করতে চাপ দেবে ভারত, আইএমএফ-এর ঋণ সহায়তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ০৮:৫৮, ২৪ মে ২০২৫

পাকিস্তানকে পুনরায় ‘ধূসর’ তালিকাভুক্ত করতে চাপ দেবে ভারত, আইএমএফ-এর ঋণ সহায়তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ

ছবি: প্রতীকী

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, পাকিস্তান তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্প্রসারিত তহবিল সহায়তা (Extended Fund Facility - EFF) কর্মসূচির আওতায় যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, তা কোনোভাবেই কর্মসূচির বাইরে ব্যবহার করতে পারবে না। এ অর্থ যাতে অননুমোদিতভাবে সরকারের ব্যয় বা ঋণ বিতরণে ব্যবহৃত না হয়, সেজন্য যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আইএমএফ-এর যোগাযোগ প্রধান জুলি কোজাগ বৃহস্পতিবার (২২ মে) জানান, এই সহায়তা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ভারসাম্য সংকট মোকাবিলার জন্য নির্ধারিত। কর্মসূচির নির্ধারিত শর্ত—বিশেষ করে রাজস্ব ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কারে ব্যত্যয় ঘটলে, পরবর্তী মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়বে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বোর্ড নিয়মিত এসব কর্মসূচি পর্যালোচনা করে, এবং পাকিস্তান বিষয়ে বোর্ড মনে করেছে যে তারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে এবং কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারেও অগ্রগতি করেছে। এজন্যই বোর্ড ঋণ অনুমোদন দিয়েছে।’

সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের এনডিটিভি জানিয়েছে, দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আইএমএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং পাকিস্তানকে সহায়তা না দেওয়ার অনুরোধ জানান।

ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা কোনো দেশের জন্য আর্থিক সহায়তার বিরোধিতা করে না, তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সহায়তার সময়কাল উদ্বেগজনক। কারণ প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বেসামরিক ও সামরিক স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল।

ভারতের দাবি, পাকিস্তান আইএমএফ-এর অর্থ সহায়তা পাওয়ার সময় অস্ত্র সংগ্রহে বাড়তি উৎসাহ পায়। ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যে বছরগুলোতে পাকিস্তান আইএমএফ-এর তহবিল পেয়েছে, সেসব বছরে অস্ত্র আমদানির হার ২০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

আইএমএফ ইতিমধ্যে পাকিস্তানকে ৭ বিলিয়ন ডলারের সম্প্রসারিত তহবিল সহায়তা (EFF) চুক্তির আওতায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার দুটি কিস্তিতে ছাড় দিয়েছে।

এই অর্থ ছাড় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, এই অর্থ পাকিস্তানের জন্য ‘সন্ত্রাসে পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার’ সামিল।

আইএমএফ অবশ্য জানিয়েছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরেই এই কর্মসূচি অনুমোদন দেয় বোর্ড এবং মার্চ ২০২৫-এ প্রথম মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়—যা পাহেলগামে হামলার এক মাস আগেই শেষ হয়। মূল্যায়নের ভিত্তিতেই ৯ মে পাকিস্তান অর্থ পায়।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের সম্ভাব্য ২০ বিলিয়ন ডলারের দ্রুত বিতরণ প্রকল্প নিয়েও ভারত উদ্বেগ জানাবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) এর সাথেও ভারতের যোগাযোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে যাতে পাকিস্তানকে আবার ‘গ্রে লিস্ট’ (ধূসর তালিকা)-এ ফেরত আনা যায়।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানকে শেষবার ২০১৮ সালে ধূসর তালিকায় রাখা হয়েছিল এবং ২০২২ সালে অপসারণের আগে চার বছর ধরে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিল দেশটি। অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন পর্যবেক্ষণকারী এফএটিএফ, অবৈধ আর্থিক কার্যকলাপ রোধে কৌশলগত ত্রুটি দেখালে দেশগুলিকে ‘ধূসর’ তালিকাভুক্ত করে।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×