
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগ (HHS) ঘোষণা করেছে, তারা ব্র্যান্ডেড ওষুধের দাম অন্য উন্নত দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করবে। এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী করা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মার্কিন ভোক্তাদের জন্য ওষুধের দাম কমানো।
এই প্রস্তাবিত মূল্যনীতি, যাকে ‘মোস্ট-ফেভারড ন্যাশন প্রাইসিং’ বলা হচ্ছে, তাতে ওষুধের দাম এমনভাবে নির্ধারণ করা হবে যেন তা ওইসব উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম হয় যারা OECD (Organisation for Economic Co-operation and Development)-এর সদস্য এবং যাদের মাথাপিছু আয় যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ।
ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য হলো ওষুধের দাম ৫৯% থেকে ৯০% পর্যন্ত কমানো। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিকল্পনায় অস্পষ্টতা আছে এবং এটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
BMO ক্যাপিটাল মার্কেটসের বিশ্লেষক ইভান সিগারম্যান মনে করেন, এই ঘোষণা আসলে একটি কৌশলগত চাপ তৈরি করার চেষ্টা— মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ানোর জন্য, না যে এটি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের লাভ কমিয়ে দিতে চায়।
এই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর শেয়ারে চাপ বেড়েছে। এই বছর যুক্তরাষ্ট্রের SPDR S&P ফার্মাসিউটিক্যাল ETF প্রায় ৫% কমেছে, যেখানে ‘S&P 500’ সূচক সামান্য ঊর্ধ্বমুখী।
ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির সংগঠন PhRMA এর মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দেশে ওষুধের দাম বেশি হওয়ার পেছনে আসল কারণ হলো মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়ায় এবং বিদেশি দেশগুলো প্রকৃত অংশ নিচ্ছে না।’
ট্রাম্প এর আগেও তাঁর প্রথম দফার শাসনে ওষুধের দাম কমানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আদালতে ব্যর্থ হন। তখনও তিনি চাইতেন, যুক্তরাষ্ট্রের দাম অন্যান্য দেশের সবচেয়ে কম দামের সঙ্গে মিলিয়ে আনা হোক।
যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি, যদিও দেশটি ওষুধ গবেষণা ও উদ্ভাবনে অনেক বেশি বিনিয়োগ করে থাকে। ওষুধ প্রস্তুতকারীরা বলছেন, এমন মূল্যে কাট ছাঁট করলে গবেষণা ও উদ্ভাবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
‘গ্লোবাল ব্যালেন্স’ বদলে দিতে পারে এই পদক্ষেপ
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ইউনান জি বলছেন, ‘এই ধরণের মূল্যনীতি সাধারণত ছোট বাজারে কাজ করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যদি এটা করে, তাহলে সারা বিশ্বের ওষুধের দাম এবং বাজার কাঠামো পাল্টে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, এতে করে ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে পুনরায় চুক্তি করতে হতে পারে। জার্মানি ও কানাডার মতো উন্নত দেশে দাম বেড়ে যেতে পারে, তবে এস্তোনিয়া বা কোস্টারিকার মতো ছোট দেশগুলি এই নীতির আওতায় পড়বে না।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র এবং মেডিকেয়ার ও মেডিকেইড সার্ভিসেসের পরিচালক ড. মেহমেত ওজ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওষুধ প্রস্তুতকারীদের জন্য স্পষ্ট লক্ষ্য প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
কেনেডি বলেন, ‘আমরা আশা করি, ওষুধ কোম্পানিগুলো আমেরিকান জনগণের জন্য দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি পালন করবে, না হলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’
এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নে ওষুধ প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, বলে সিনেটের এক শুনানিতে জানান কেনেডি।
সূত্র: রয়টার্স।
রাকিব