ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চিকেনস নেক ছেড়ে বঙ্গোপসাগরে চোখ ভারতের, আরাকান আর্মি কি সত্যি হতে দেবে ভারতের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ১৮ মে ২০২৫; আপডেট: ২৩:১৯, ১৮ মে ২০২৫

চিকেনস নেক ছেড়ে বঙ্গোপসাগরে চোখ ভারতের, আরাকান আর্মি কি সত্যি হতে দেবে ভারতের স্বপ্ন

ছবিঃ সংগৃহীত

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য — যেগুলো 'সেভেন সিস্টারস' নামে পরিচিত — স্থলবেষ্টিত হওয়ায় এই অঞ্চলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যোগাযোগে বাংলাদেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মো. ইউনূস। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ হচ্ছে এই অঞ্চলের সমুদ্রপথের একমাত্র অভিভাবক,” যা ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।

ড. ইউনূসের এই বক্তব্যের কিছুদিনের মধ্যেই ভারতের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পায় যে, ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডরের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ রক্ষায় নিরাপত্তা ও সেনা মোতায়েন আরও জোরদার করা হয়েছে।

এবার ভারত বাংলাদেশকে বাইপাস করে একটি বিকল্প নৌ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রস্তাবিত রুটটি শুরু হবে কলকাতা বন্দর থেকে, সেখান থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সিত্তে বন্দরে পৌঁছাবে। এরপর সড়কপথে চিত্ত থেকে কালাদান নদী ধরে পালেটোয়া পর্যন্ত এবং সেখান থেকে সড়ক পথে মিজোরামের জরিনপুই পর্যন্ত সংযোগ স্থাপিত হবে। পরবর্তী ধাপে এটি লুংলেই হয়ে আইজল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

এই ‘কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প’-টি ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বর্তমানে গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মিয়ানমারে বিশেষ করে রাখাইন প্রদেশের ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা বিদ্রোহী সংগঠন 'আরাকান আর্মি'-র নিয়ন্ত্রণে থাকায় প্রকল্পটি সময়মতো বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ড. মো. ইউনূসের বক্তব্যের পরপরই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট চুক্তি বাতিল করে দেয় দিল্লি। ওই চুক্তির আওতায় ভারত বাংলাদেশ হয়ে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সহজে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারত। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে সেই পথ পরিহার করে বিকল্প রুট বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

ভারত একসময় প্রায় ৫০০০ কোটি রুপির একটি রেল প্রকল্প হাতে নিয়েছিল, যার মাধ্যমে সেভেন সিস্টারস অঞ্চলকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে প্রকল্পটি হঠাৎ স্থগিত ঘোষণা করে ভারত সরকার।

পরবর্তীতে, ৩০ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা ২২,৮৬৪ কোটি রুপির ‘কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প’-এর অনুমোদন দেয়। এই প্রকল্পের আওতায় ভারতের মেঘালয়ে ১৪৫ কিলোমিটার এবং আসামে ২২ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিলং থেকে শিলচর পর্যন্ত যাত্রার সময় সাড়ে আট ঘণ্টা থেকে কমে পাঁচ ঘণ্টায় নেমে আসবে। এতে শুধু বাণিজ্যিক সুবিধাই নয়, বরং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবেলায় ভারতের সামরিক উপস্থিতিও আরও সুসংহত হবে বলে ধারণা করছে দেশটির গণমাধ্যম।

তথ্যসূত্রঃ https://youtu.be/IQ-Qqq65KGY?si=Q47pK7-Are9z59TE

মারিয়া

×