
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিরক্ষা খাতে দ্রুত এগিয়ে চলা দেশ তুরস্ক এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনছে শতাধিক অত্যাধুনিক ‘আমরাম’ মিসাইল। আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য এই মিসাইলগুলো মূলত স্বল্পপাল্লার হলেও প্রযুক্তির দিক থেকে অত্যন্ত উন্নত। নানা ধরনের সংস্করণসহ পুরো চুক্তির আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
তবে চুক্তির খবর সামনে আসতেই উদ্বেগে কাঁপছে নয়াদিল্লি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যেন আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে গেছেন। কারণ, তুরস্ক ও পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতা দিনে দিনে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, আর এই মিসাইল চুক্তিকে কেন্দ্র করেই ভারতের দুশ্চিন্তা চরমে উঠেছে।
এর পেছনে রয়েছে অতীতের একটি রক্তক্ষয়ী পর্ব। ২০১৯ সালে ভারতের পুলওয়ামায় ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন আধাসামরিক সদস্য নিহত হন। প্রতিক্রিয়ায় ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালায়, যার পরপরই ঘটে ১৯৭১ সালের পর প্রথম ভারত-পাকিস্তান আকাশযুদ্ধ। সেই সংঘাতে পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে ‘আমরাম’ মিসাইল ছোড়া হয় ভারতীয় যুদ্ধবিমানের দিকে।
ভারতীয় সরকারি সূত্র দাবি করে, সে সময় পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই মিসাইল ব্যবহার করেছিল। যেহেতু পাকিস্তানের কাছে আমরাম নিক্ষেপের উপযুক্ত কেবল এফ-১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে, তাই এই অভিযোগের ভিত্তি জোরালো। ফলে আবারও তুরস্কের কাছ থেকে মিসাইল সংগ্রহ এবং তা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের হাতে পৌঁছানোর সম্ভাবনায় ভারতের দুশ্চিন্তা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, এই ঘটনা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র কীভাবে কখনও কখনও ওয়াশিংটনেরই মিত্র দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। তার ওপর তুরস্ক ও পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গভীর। বিভিন্ন সময় তুরস্ক পাকিস্তানকে সোঙ্গার, ইহা সহ উন্নতমানের ড্রোন সরবরাহ করেছে, যা কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতবিরোধী সংঘাতে ব্যবহার করেছে পাকিস্তান।
এবার আমরাম মিসাইল নিয়ে ভারতের উদ্বেগ আরও বেড়েছে এর প্রযুক্তিগত শক্তির কারণে। ‘আমরাম 120C’ সংস্করণটি বর্তমানে সবচেয়ে উন্নত সংস্করণগুলোর একটি। এটি সলিড-ফুয়েল রকেট মোটরচালিত এবং প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার গতিতে ১৮০ কিলোমিটার দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৫, এফ-১৬, এফ-২২ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে এটি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়।
ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এফ-১৬ বহর রয়েছে তুরস্কের কাছে— সংখ্যা প্রায় ২৭০টি। ফলে এই মিসাইলগুলো তুরস্কের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তবে ভারত আশঙ্কা করছে, এই মিসাইল ভবিষ্যতে পাকিস্তানের হাতে পৌঁছাতে পারে এবং ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে।
এই সম্ভাবনাকে ঘিরেই ভারতের উদ্বেগ এখন তুঙ্গে। এখন দেখার বিষয়, তুরস্ক ও পাকিস্তানের এই সামরিক ঘনিষ্ঠতা কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=iX0Zoc_2FLA
এম.কে.