ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

যুদ্ধের নাম করে সাংবাদিক হত্যা: মুখোশ খুলে গেল ইসরায়েলের

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ৮ মে ২০২৫

যুদ্ধের নাম করে সাংবাদিক হত্যা: মুখোশ খুলে গেল ইসরায়েলের

ছবি: সংগৃহীত

নতুন এক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতারা আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক হত্যার ঘটনায় যিনি গুলি চালিয়েছিলেন, তাঁর পরিচয় উন্মোচন করেছেন বলে দাবি করেছেন।

‘হু কিল্ড শিরিন?’ নামের ৪০ মিনিটের এই অনুসন্ধানমূলক প্রামাণ্যচিত্রটি বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক মিডিয়া সংস্থা জেটেও প্রকাশ করে। এতে দাবি করা হয়েছে, শিরিনকে হত্যা করেন এক ২০ বছর বয়সী ইসরায়েলি সেনা, যিনি প্রথমবারের মতো দখলকৃত পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযানে অংশ নিচ্ছিলেন। একইসঙ্গে এতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক মিত্র ইসরায়েলকে দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টার বিষয়টিও উন্মোচন করা হয়েছে।

প্রামাণ্যচিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক ডিওন নিসেনবাম আল জাজিরাকে জানান, তাঁরা এই হত্যার পেছনে প্রকৃত ব্যক্তি কে, সেটি বের করতেই অনুসন্ধান শুরু করেন—যা এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের গোপন রাখা একটি তথ্য। তাঁরা আশা করছেন, এই অনুসন্ধান যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে তদন্তের পথ খুলে দিতে পারে।

নিসেনবাম বলেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্তে এসেছিল যে শিরিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত প্রশাসনের ভেতরে পরবর্তীতে বাতিল করা হয়।

তিনি আরও বলেন, “আমরা বেশ কিছু উদ্বেগজনক প্রমাণ পেয়েছি যে ইসরায়েল ও বাইডেন প্রশাসন উভয়েই শিরিনের হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিয়েছে এবং হত্যাকারী সেনাকে দায়মুক্তি দিয়েছে।”

শিরিনের ভাই অ্যান্টন আবু আকলেহ বলেন, এই প্রামাণ্যচিত্রটি তাঁদের পরিবারের জন্য “খুব গুরুত্বপূর্ণ”। “আমি নিশ্চিত এটি আরও আলোকপাত করবে এবং প্রমাণ দেবে যে শিরিনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল, যেমনটি ফিলিস্তিনে অনেক সাংবাদিকের ক্ষেত্রেই ইসরায়েলি বাহিনী করে থাকে।”

এই প্রামাণ্যচিত্রে শুধু সাবেক মার্কিন কর্মকর্তাই নন, সাবেক শীর্ষ ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও সেনা সদস্য এবং শিরিনের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নিসেনবাম বলেন, “আমরা আশা করি মানুষ আবার মনে করবে শিরিন কতটা অনন্য ছিলেন।”

ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা

২০২২ সালের ১১ মে, পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি অভিযানের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে শিরিন আবু আকলেহ নিহত হন। সে সময় তিনি হেলমেট এবং স্পষ্টভাবে ‘প্রেস’ চিহ্নযুক্ত ভেস্ট পরা অবস্থায় ছিলেন। আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক এই হত্যাকে “ঠাণ্ডা মাথায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড” হিসেবে নিন্দা জানায়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘের তদন্তে উঠে এসেছে, আবু আকলেহকে সম্ভবত ইচ্ছাকৃতভাবেই ইসরায়েলি সেনারা গুলি করে হত্যা করেছে।

শুরুর দিকে ইসরায়েল দোষ চাপানোর চেষ্টা করে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের উপর এবং দাবি করে তারাই গুলি চালিয়েছে। পরে তারা সেই দাবি থেকে সরে আসে এবং স্বীকার করে যে তাদের সেনারা ভুলক্রমে গুলি চালিয়েছে।

এক বছর পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শিরিনের মৃত্যুতে “গভীর দুঃখ” প্রকাশ করে, তবে দায়ী সেনাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক তদন্ত চালাবে না বলেও জানায়।

ইসরায়েলের এই দুঃখপ্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র তাদের অপরাধ তদন্তের আহ্বান থেকেও সরে আসে।

শিরিন আবু আকলেহর মৃত্যু বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ছড়ায় এবং ফিলিস্তিনে সাংবাদিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক নজর কাড়ে।

সংবাদপত্র বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ শুক্রবার জানায়, গাজায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলার প্রথম ১৮ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রায় ২০০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, যাদের অন্তত ৪২ জন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনের সময়ই প্রাণ হারান।

 

সূত্র: https://www.aljazeera.com/news/2025/5/8/new-documentary-identifies-soldier-who-shot-shireen-abu-akleh

আবীর

×