
এভাবেই আদিবাসী শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন নাজমুল তুহিন।
নেত্রকোণার দূর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বারোমারী-লক্ষ্মীপুর গ্রামের আদিবাসী ও মুসলিম শিশুদের পড়াশোনার একমাত্র ভরসা হচ্ছে ‘‘প্রকৃতির পাঠশালা’’। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্স পাশ করা নাজমুল তুহিন বিনা পারিশ্রমিকে শিশুদের লেখাপড়া করিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে ওই গ্রামে স্থাপিত প্রকৃতির পাঠশালায় গিয়ে এমনটাই দেখা গেছে।
আশপাশের গ্রাম গুলো থেকে আসা গারো, হাজং ও মুসলিম জনগোষ্ঠির প্রায় ৫০ জন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশুরা এখান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ নিচ্ছে। এ কার্যক্রমে সন্তষ্টি প্রকাশ করে কেউবা কিনে দিয়েছেন বিদ্যালয়ের জন্য জায়গা জমি। সেইসাথে গ্রামের সকলে মিলে পাঠশালার জন্য টিনের ছাউনি দিয়ে বানিয়েছেন একটি ঘর। পাঠশালার পরিধি বাড়াতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন নাজমুল তুহিন।
জানা যায়, গ্রামটিতে সংখ্যা গুরু গারো, হাজং ও অতি অল্প কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস। কৃষিপ্রধান এসব পরিবারের অনেক শিশুই পুঁশিগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া পরিবারগুলোর শিশুদের জন্য আশপাশের এলাকাতে নেই কোনো সরকারি বা বে-সরকারি বিদ্যালয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসেন সুদুর ঢাকা থেকে নাজমুল তুহিন নামের এক যুবক। তিনি ওই এলাকার প্রকৃতিকে ভালোবেসে, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে প্রায় ৫ বছর আগে ওই গ্রামেই গড়ে তোলেন এই প্রকৃতির পাঠশালা।
আশেপাশের শিশুরা প্রতিদিন সকালে পড়তে আসে পাঠশালাতে। এখানে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বইয়ের পাঠ গুলোর সাথে সঙ্গীত ও শিক্ষা দেয়া হয় তাদের। প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে একজন অতিরিক্ত শিক্ষক। আর্থিক সংকটের জন্য নিভু নিভু অবস্থায় চলছে স্কুলটি। বর্তমানে অর্থের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।
এ নিয়ে নাজমুল তুহিন বলেন, এই বাচ্চা গুলো আমার সন্তানের মতো। আমার সাধ আছে কিন্ত কোন সাধ্য নাই। এই বাচ্চাগুলো আগে স্কুলে ভালো রেজাল্ট করতো না। আমি চার পাঁচ বছর ধরে এখানে বিনা পারিশ্রমিকে শুরু করি এই পাঠশালা। কোনদিন একবেলা, কোনদিন দু'বেলা খেয়ে তাদের পিছনে শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। ওরা এখন নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে। স্কুলের ফলাফলও ভালো করছে। স্কুলের পরিধি বাড়াতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি
জমিদাতা রজনী কান্ত হাজং বলেন, ছোটবেলা আমার বাবা মারা গেছেন, অভাবের জন্য পড়াশোনা করতে পারিনি। পরবর্তীতে খুব কষ্ট করে স্নাতক পাশ করেছি। পিছিয়ে পড়া শিশুদের কথা ভেবে আমি ওই সীমান্তবর্তী এলাকায় পাঠশালার জন্য জায়গা কিনে দিয়েছি। এর সমৃদ্ধির জন্য সকলের সহযোগিতা চাই।
উপজেলা নিবাহী অফিসার নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর বলেন, শিশুরা জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তাদের উজ্বল ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষিত করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। প্রকৃতির পাশে গড়ে ওঠা পাঠশালায় ইতোপুর্বে কিছু সহায়তা করেছি। পাঠদান সহজ করার জন্য প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন থেকে আরো সহযোগিতা করা হবে।
রিফাত