ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার

কানাডা-ভারত সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ছেই

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কানাডা-ভারত সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ছেই

হরদীপ সিং নিজ্জর

ভারতের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় জনপ্রিয় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যার অভিযোগ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এ অভিযোগ তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে কানাডা। কিন্তু কানাডার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারত। নিজেদের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কারের জেরে মঙ্গলবার কানাডার সিনিয়র কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে নয়াদিল্লী। খবর এনডিটিভি, সিএনএন ও বিবিসি অনলাইনের।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী পাঁচদিনের মধ্যে বহিষ্কৃত কানাডার কূটনীতিককে দিল্লি ত্যাগ করার জন্য বলা হয়েছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা কানাডার পার্লামেন্টে তাদের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেখেছি এবং এটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। এ ছাড়া কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যও প্রত্যাখ্যান করছি। বিবৃতিতে বলা হয়, কানাডায় যে কোনো ধরনের সহিসংতায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার দাবি অদ্ভুত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে একই ধরনের অভিযোগ করেছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। সেটি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। আমরা গণতান্ত্রিক এবং আইনের শাসনের প্রতি কঠোরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 
এদিকে পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় জনপ্রিয় শিখ নেতা হারদীপ সিং নিজ্জর হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত থাকতে পারে। এ সংক্রান্ত নথি দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাতে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একইসঙ্গে কানাডার ভেতরে নিজ নাগরিকের হত্যার পেছনে বিদেশী কোনো সরকার জড়িত থাকলে তা দেশটির সার্বভৌমত্ব বিরোধী কর্মকা- হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও মন্তব্য করেন ট্রুডো। পার্লামেন্টে তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত জি ২০ সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রুডো আশা করেন ভারত সরকার এ বিষয়ে তাদেরকে সহায়তা করবে।

এদিকে ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র,  ব্রিটিশ ও অস্ট্রেলিয়া। তিন দেশের পক্ষ থেকে আলাদা করে এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে ওঠা এসব গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে মিত্রদেশ কানাডার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হচ্ছে। কানাডা কর্তৃপক্ষের তদন্ত চলা অবস্থায় এ নিয়ে মন্তব্য করাটা যথার্থ হবে না বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করাটা জরুরি। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র আন্দ্রিয়েন ওয়াটসন এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো যে অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

কানাডীয় পক্ষের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। কানাডায় এ নিয়ে তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করাটা জরুরি। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংয়ের মুখপাত্র বলেছেন, নয়াদিল্লির কাছে ক্যানবেরার উদ্বেগের কথা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে ওই মুখপাত্র বলেন, এসব অভিযোগ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ঘটনার তদন্তের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বাস করে, সার্বভৌমত্ব এবং আইনের শাসনের প্রতি সব দেশকে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।
ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধরের ভার সিং পুরা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন হরদীপ সিং নিজ্জর। ওই গ্রামেই জন্ম তার। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কানাডায় বসবাস করতেন তিনি। পাঞ্জাব থেকে ১৯৯৭ সালে তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। সেখানে মিস্ত্রির কাজ করতেন। ভারতের অভিযোগ, হরদীপ সিং খালিস্তান আন্দোলনের একজন নেতা। খালিস্তান আন্দোলনকারীরা ভারতের চোখে বিচ্ছিন্নতাবাদী। খালিস্তানিদের সংগঠন সন্ত্রাসী কর্মকা-ে যুক্ত এবং কানাডা বরাবরই খালিস্তানিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ দিল্লির। খালিস্তান টাইগার ফোর্স (কেটিএফ) নামে একটি সংগঠন রয়েছে। ভারত একে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে।

ভারতের অভিযোগ, হরদীপ সিং কেটিএফের মূল পরিকল্পনাকারী। এ ছাড়া ভারতে নিষিদ্ধ শিখ ফর জাস্টিস (এসএফজে) নামে আরেকটি সংগঠনের সঙ্গেও হরদীপ সিং যুক্ত ছিলেন বলে নয়াদিল্লির অভিযোগ। ২০২০ সালে ভারত সরকার হরদীপ সিংকে সন্ত্রাসী হিসেবে দাগিয়ে দেয়। দেশটির ওয়ান্টেড তালিকায়ও তার নাম ছিল। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে শিখ নেতা হরদীপ সিংয়ের পরিচিতি ছিল। 
ভারতের পাঞ্জাবে শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তানের পক্ষে প্রচার চালাতেন তিনি। হরদীপ সিংয়ের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা ছিল। ২০০৭ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ছয়জন নিহত হন, আহত হন ৪০ জন। এ বিস্ফোরণের ঘটনায় করা মামলার আসামি ছিলেন হরদীপ সিং। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯ সালে পাতিয়ালায় রাষ্ট্রীয় শিখ সঙ্গতের প্রেসিডেন্ট রুলদা সিংয়ের হত্যায়ও হরদীপ সিং জড়িত ছিলেন। ভারতের জলন্ধরে এক হিন্দু পুরোহিতকে খুনের মামলায় পলাতক হরদীপ সিংকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ঘটনায় হরদীপ সিংয়ের সম্পৃক্ততারও অভিযোগ ওঠে। এ পটভূমিতে গত ১৮ জুন কানাডার সুরি শহরে একটি গুরুদুয়ারার (শিখ উপাসনালয়) বাইরে খুন হন হরদীপ সিং। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

×