
.
মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার লোকসভা সচিবালয় তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল লোকসভায় কেরলের ওয়েনাড আসনের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় তার পার্লামেন্টের সদস্যপদ খারিজ হয়ে গেল। রায় ঘোষণার দিন থেকেই তিনি আর পার্লামেন্টের সদস্য থাকার যোগ্য নন, প্রজ্ঞাপনে এমনটাই বলা হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
‘মোদি’ পদবি নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে চার বছর আগে করা এক মানহানির মামলায় বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদন্ড দেয় গুজরাটের সুরাটের একটি আদালত। ওয়েনাড থেকে নির্বাচিত এমপি রাহুল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্নাটকের কোলারে এক জনসভায় পলাতক ব্যবসায়ী নীরব মোদি ও ললিত মোদির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নামের মিল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে ওই মন্তব্য করেছিলেন।
‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কি করে?,’ রাহুলের এই মন্তব্যের জেরে বিজেপি বিধায়ক ও গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুর্নেশ মোদি কংগ্রেসের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেছিলেন। সাজা হলেও রাহুল জামিনে রয়েছেন, তাকে আপিল করার সুযোগ দিতে রায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
রায়ের পর দিন স্বল্প সময়ের জন্য লোকসভায় গিয়েছিলেন রাহুল, তিনি সেখানে দলীয় এমপিদের এক বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে তার মা, কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধীও ছিলেন। বেশকিছু ইস্যুতে হট্টগোলের কারণে শুরুর কয়েক সেকেন্ড পরই লোকসভার অধিবেশন দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়, রাহুলও এরপর পার্লামেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে যান। রাহুল গান্ধীকে কারাদন্ড দেওয়ার প্রতিবাদে এদিন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলোর সাংসদরা নয়াদিল্লির বিজয় চক থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন অভিমুখে মিছিল শুরু করলেও পুলিশ বাধায় তা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যেই ‘গণতন্ত্র বিপদে’ লেখা ব্যানার নিয়ে তাদের মিছিল শুরু হয়েছিল। পুলিশ নেতাদের আটক করে বাসে কাছাকাছি একটি থানায় নিয়ে যাওয়ায় মিছিলটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
পুলিশ বলছে, বিরোধীদলীয় এমপিদের মিছিলটির অনুমতি ছিল না। তা ছাড়া প্রেসিডেন্টও বৈঠকের জন্য এমপিদেরকে কোনো সময় দেননি। আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যু তদন্তে যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটির দাবি জানানো এই বিরোধী দলগুলো প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সাক্ষাৎ চেয়েছে। দলগুলো বলছে, ধনী শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথিত বন্ধুত্ব নিয়ে আলোচনা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতেই ২০১৯ সালে করা একটি মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীকে কারাদন্ড দিয়ে শোরগোল তোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশোধমূলক রাজনীতির কারণে রাহুলকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে শুক্রবার একাধিক রাজ্যে কংগ্রেস বিক্ষোভও দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
রাহুলের বিরুদ্ধে সুরাটের আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থেকে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি ডিকে শিবকুমারসহ অনেক নেতাকর্মীকে পুলিশ আটকও করেছে। বিজেপি বলছে, ‘চোর’ মন্তব্যে পিছিয়ে পড়া ‘মোদি’ সম্প্রদায়কে অপমান করায় স্বাধীন বিচার বিভাগ রাহুলকে দন্ড দিয়েছে, এখানে তাদের হাত নেই। কংগ্রেসের ভাষ্য, রাহুলকে চুপ করিয়ে দিতেই এই দন্ড দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের সরকার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের হয়রানি করছে, বলেছেন লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খড়েগ। ‘এই মিছিল দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য,’ বলেন কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি।
সুরাটের আদালতের রায়কে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছেন কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি কেসি ভেনুগোপাল। রাহুল যেদিন থেকে আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যু নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন, সেদিন থেকেই তাকে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে সরকার, বলেছেন তিনি। ‘রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস এরপরও কথা বলবে। এটা রাহুল গান্ধীর কোনো ইস্যু নয়, দেশের পরিস্থিতিই এখন এমন। সব বিরোধীদলের ওপর নির্যাতন চলছে। বিভিন্ন দল যে সংহতি জানাচ্ছে, তাতে আমি খুশি,’ বলেছেন তিনি।