
ছবি: সংগৃহীত
গাজার উপর চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের ৭৭ বছর পার হলেও আরব বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো। একটি জাতি তার জন্মভূমি হারিয়ে পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীতে— ফিলিস্তিন। অথচ ইসলাম ধর্মের ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এই ভূমিকে রক্ষায় সামনে আসেনি কোনো আরব রাষ্ট্র। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা হত্যাযজ্ঞ আর ধ্বংসযজ্ঞও মন গলাতে পারেনি সৌদি বাদশাহ, সিসি কিংবা এমবিএসদের। উল্টো আরব নেতারা ইসরাইলি বর্বরতার প্রতি একরকম নীরব সম্মতিই দিয়েছেন।
এক সময়ের নৈসর্গিক গাজা আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যেখানে শিশুদের হাসি আর খেলাধুলার দৃশ্য দেখা যেত, আজ সেখানে শুধুই বারুদের গন্ধ আর আর্তনাদ। এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য যেমন দায়ী ইসরাইল, তেমনি নেপথ্যের আরেক কারিগর আরব নেতাদের নৈতিক দেউলিয়াত্ব। স্বাধীনতার লড়াইয়ে ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা হামাস, যারা বহু ত্যাগ স্বীকার করে গাজাবাসীর অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেছে, সেই হামাসকেই কটাক্ষ করলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি তাদের ‘কুকুর’ বলে গালি দিয়ে অস্ত্রসমর্পণের আহ্বান জানান। অথচ এর আগের এক ভাষণে তিনি নিজেই বলেছিলেন, “প্রাণীরাও যেখানে নিরাপত্তা পায়, সেখানে ফিলিস্তিনিরা আজ নিরাপত্তাহীন।”
ইসলামের জন্মভূমি সৌদি আরব— যা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের দাবিদার— সেই দেশটিও গাজার মুসলিম ভাইদের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং হামাসকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে ইসরাইলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে। এই ষড়যন্ত্রে অংশ নেয় সংযুক্ত আরব আমিরাতও। এমনকি তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, হামাস গাজার ক্ষমতা না ছাড়লে তারা পুনর্গঠনের কোনো উদ্যোগ নেবে না।
এই নীরবতা নতুন নয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৯৪৮ সালের নাকবার পর আল হোসেইনি সিরিয়ার মাধ্যমে আরব লিগের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু তখনও ফিলিস্তিন পেয়েছিল নিস্তব্ধতা আর নিষ্ক্রিয়তা। এক সময় ইসরাইল-বিরোধী শক্তিশালী আরব রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত মিশরও শেষ পর্যন্ত ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিতে সই করে নিজেকে বিকিয়ে দেয়। ইসরাইলের স্বীকৃতি দেয়ার বিনিময়ে তারা পায় সিনাই উপদ্বীপ ও প্রতিবছর দেড় বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সাহায্য।
জর্ডানের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। ইসরাইলের সাথে গোপন বাণিজ্য, ত্রাণ প্রবেশ আটকে রেখে অর্থ উপার্জন, এমনকি ইরান থেকে ইসরাইলে আসা ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে ইসরাইলের পক্ষ নেয়া— সবই প্রমাণ করে তারা কার পক্ষে। বাদশাহ আব্দুল্লাহ প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।
যখন গাজা আগুনে পুড়ছে, তখন আরব বিশ্বের নেতারা বরং গণহত্যাকারীদের সঙ্গে হাসিমুখে আলিঙ্গনে ব্যস্ত। এমবিএস-এর মতো নেতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাদরে আমন্ত্রণ জানান, যিনি গণহত্যার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক।
গাজা যখন ধ্বংসস্তূপে, তখন ইতিহাস হয়তো লিখে রাখবে— “ফিলিস্তিনিরা মরছিল, আর আরব বিশ্ব উৎসবে মেতেছিল।”
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=q51OFhqKL7I
এম.কে.