
ছবি: সংগৃহীত
প্রকৃতি সাধারণত ছাড় দেয়, তবে ছেড়ে দেয় না— এ প্রবাদ যেন হুবহু মিলে গেছে ইসরায়েলের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে। সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না দেশটির জন্য। দক্ষিণে ভয়াবহ দাবানল আর উত্তরে হুথি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা— দুই দিক থেকেই যেন গজব নেমে এসেছে ইসরায়েলে।
সম্প্রতি ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইতিহাসের অন্যতম বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের রাজধানীমুখী অঞ্চলে। তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশটির প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার— বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর। একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি বিমানবন্দরে আঘাত হানে, আহত হন অন্তত আটজন, এবং বিমানবন্দরের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হুথিদের এই হামলা ছিল অত্যন্ত পরিকল্পিত। একদিকে হাইপারসনিক প্রযুক্তির ব্যবহার যা ইসরায়েলের আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং বা অ্যারো সিস্টেমের মতো প্রচলিত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম, অন্যদিকে হামলার লক্ষ্য ছিল কৌশলগত— শুধু জনবসতি নয়, বরং দেশের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু। এই ঘটনার মাধ্যমে হুথিরা বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা জোরালোভাবে তুলে ধরেছে।
হুথি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যতদিন গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলবে, ততদিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চলবে। অর্থাৎ এবার গাজার প্রতিশোধ শুধু সীমান্তের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকছে না— হাজার কিলোমিটার দূরের ইয়েমেন থেকেও আঘাত আসছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল এখনো সামলাতে পারছে না দেশের ভেতরের আরেকটি মারাত্মক বিপর্যয়— দাবানল। সম্প্রতি জেরুজালেম থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি অঞ্চলে শুরু হওয়া আগুন ছড়িয়ে পড়ে ৫,০০০ একরেরও বেশি বনভূমিতে। এর প্রভাবে জেরুজালেম-তেল আবিব হাইওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়, শতাধিক পরিবারকে সরিয়ে নিতে হয়, আর বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাস।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, যারা ইসরায়েলকে ক্ষতি করবে, তাদের সাতগুণ মূল্য চুকাতে হবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, হুথিদের মতো সংগঠিত, প্রস্তুত এবং উচ্চ মনোবলসম্পন্ন গেরিলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কেবল প্রতিশোধের হুমকি কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি ইসরায়েলকে এক সংকটময় মোড়ে এনে দাঁড় করিয়েছে। এখন আর সে আগ্রাসনকারী নয়, বরং আত্মরক্ষায় ব্যস্ত এক রাষ্ট্র, যার প্রতিটি আগ্রাসনের জবাব আসছে আগুনে, ধ্বংসে, আর আকাশপথে অহংকার ভেঙে পড়ার মধ্য দিয়ে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=ZGtas2_oms4
এম.কে.