
ছবি: সংগৃহীত
বড় আশা নিয়ে বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে তাকিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভেবেছিলেন, ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা এবার কূটনীতিতে বন্ধুত্বে রূপ নেবে। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দিলেন খোদ ট্রাম্প নিজেই। বরং বন্ধুত্বের মোড়কে দিলেন একপ্রকার কূটনৈতিক চপেটাঘাত। ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার এ ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানিয়ে দেন, পহেলা আগস্ট থেকেই কার্যকর হচ্ছে ভারতের উপর এই নতুন পাল্টা শুল্ক নীতি। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য ভারতকে চরম মূল্য চোকাতে হবে বলেও কড়া বার্তা দেন তিনি। আগেই রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে হুঁশিয়ারি এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে—এবার তার বাস্তব ফল ভোগ করল মোদি সরকার।
নিজের ক্ষোভ সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন ট্রাম্প। কড়া সুরে ভারতকে একহাত নেন তিনি। বলেন, বন্ধুত্ব থাকলেও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক অনুপাতিক হারে খুবই কম। কারণ হিসেবে তুলে ধরেন ভারতের অতিমাত্রার শুল্কনীতি। তার ভাষায়, "ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপকারী দেশগুলোর একটি। দিল্লি যেকোনো দেশের তুলনায় সবচেয়ে কঠোর ও বিরক্তিকর অশক্য বাধা আরোপ করে।"
এই বক্তব্যে ট্রাম্প শুধু ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়েই থেমে থাকেননি, টেনে আনেন রাশিয়া প্রসঙ্গও। রাশিয়া থেকে ভারতের সামরিক সরঞ্জাম ও জ্বালানি কেনা নিয়ে তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, "যখন গোটা বিশ্ব চায় রাশিয়া যেন ইউক্রেনে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে, তখন ভারত ও চীনের মতো দেশগুলো রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানির ক্রেতা হয়ে উঠেছে—এটা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।"
এদিকে ট্রাম্পের একঘরে করা বার্তায় উঠে এসেছে পাকিস্তান প্রসঙ্গও। ভারতকে ছাপিয়ে এবার পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করছেন বলেও জানান তিনি। বলেন, তার প্রশাসন ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের সাথে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার আওতায় ইসলামাবাদের বিশাল তেল সম্পদের উন্নয়নের কাজে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। এজন্য এমন একটি মার্কিন তেল কোম্পানিকে নির্বাচন করা হয়েছে যারা এই অংশীদারিত্বে নেতৃত্ব দেবে। এমনকি রহস্যময় ভঙ্গিতে তিনি বলেন, "কে জানে, হয়তো একদিন পাকিস্তানের এই তেলই ভারতেও রপ্তানি করব!"
এই মন্তব্য থেকেই অনেকে অনুমান করছেন, পাকিস্তানের তেল ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারে। ট্রাম্পের কথায় কূটনৈতিক রহস্য যেমন আছে, তেমনি আছে হুমকির ছায়াও।
এছাড়া পহেলা আগস্ট থেকেই ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পণ্যে নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য ভারতকে আর কী ধরনের দণ্ড বা শাস্তি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, সেটি এখনো স্পষ্ট করেননি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
এতকিছুর পরেও ভারতের পক্ষে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—বন্ধুত্বের মুখোশ পড়া যুক্তরাষ্ট্রের আসল চেহারা কী? মোদি সরকার এই চাপ সামলাতে পারে কিনা তা নির্ভর করছে আগামী দিনের কূটনৈতিক কৌশলের উপর। তবে স্পষ্টতই বলা যায়, বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে মোদির একক ঘুঁটি এবার ট্রাম্পের চাপে পড়ে যাচ্ছে ঘোর বিপাকে।
শেখ ফরিদ