মন্ত্রিসভায় জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসোয়ান।
মোদির মন্ত্রিসভায় জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসোয়ান। বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে এলেও তার রাজনৈতিক উত্থান অতটা সহজ ছিল না। এখন তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
একযুগেরও বেশি সময় আগে ২০১১ সালে বলিউডের সিনেমা মিলে না মিলে হাম-এ কঙ্গনা রানাওয়াতের বিপরীতে অভিনয় করে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন কিন্তু এতে সাফল্য আসেনি। এর পর বাবা রামবিলাস পাসোয়ানের হাত ধরে রাজনীতিতে পথ চলা শুরু করেন চিরাগ পাসোয়ান। তিন বছর পর ২০১৪ সালে গাইডেন্সে জামুই লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রথম জয়ী হয়েছিলেন চিরাগ। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ফের ওই কেন্দ্র থেকে ভোটে জেতেন তিনি।
একসময়ে এনডিএ সরকারের মন্ত্রী থাকা রামবিলাস পাসোয়ানের মৃত্যুর পর জনশক্তি পার্টির দায়িত্ব কাঁধে নেন চিরাগ। এর পর চিরাগের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় কাকা পশুপতি কুমারের। এতে দুভাগে ভাগ হয়েছে যায় লোক জনশক্তি পার্টি।
এরপর বিজেপিকে সমর্থনের কথা পরিষ্কার করে দিয়ে প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের আট বার জেতা আসন হাজিপুর থেকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন লড়ার সিদ্ধান্ত নেন চিরাগ। একসময়ে বিহারের দলিত সম্প্রদায়ের সবথেকে বড় নেতা রামবিলাস পাসোয়ানের জুতোতে পা গলিয়ে এবার বিহারে তার নেতৃত্বে পাঁচটি আসনে নির্বাচনে লড়াই করে সবকটিতেই জয় পায় লোক জনশক্তি পার্টি।
এদিকে ২০২০ সালে রামবিলাস পাসোয়ানের মৃত্যুর পর কারা পশুপতি পারসের সঙ্গে পারিবারিক ও রাজনৈতিক লড়াই শুরু হয় চিরাগের। দলের অন্দরে এই লড়াই চালনোর সঙ্গে সঙ্গে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া বিহার বিধানসভা নির্বাচনে চিরাগের নেতৃত্বে একাই লড়াই করে লোক জনশক্তি পার্টি।
নীতীশ কুমারের জেডিইউ প্রার্থীদের যে সমস্ত আসনে প্রার্থী দিয়েছিল সেইসবগুলোতে প্রার্থী দিয়ে নীতীশ কুমারের দলের পারফর্মনেন্সকে প্রভাবিত করেছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে বিহার বিধানসভার নির্বাচনে নীতীশ কুমারের দলের যেখানে ৭০টি আসন পেয়েছিল সেখানে চিরাগের বুদ্ধি ও পরিকল্পনায় ২০২০ সালে মাত্র ৪৩টি আসনে আটকে যায় নীতীশ কুমারের দল। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে চিরাগের নেতৃত্বে লোক জনশক্তি পার্টি ভালো ফল করার বিহারের একজন গুরুত্বপূর্ণ দলিত রাজনৈতিক নেতা হিসেবে উত্তরণ হয় চিরাগের। এরপর ২০২১ সালে চিরাগ ও তার কাকার রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে বিভক্ত হয় লোক জন পার্টি। সেই সময়ে পারসের সঙ্গে চিরাগের সঙ্গ ছেড়েছিলেন দলের ৬ জন সাংসদের পাঁচজন। সে সময় মাত্র একজন সাংসদ চিরাগের সঙ্গে থাকলেও ছিল না কোনও বিধায়ক।
চিরাগকে ছেড়ে পশুপতি পারসকে সঙ্গে নিয়ে তাকে সেসময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও বানিয়েছিল বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। তখন চিরাগকে শুধু এনডিএ থেকে সরিয়ে দেওয়াই হয়নি দলের প্রতীক পেয়ে গেছিলেন তার কাকা।
নিজের হাল ঠিক করতে এরপর বিহারজুড়ে আশীর্বাদ যাত্রা করেন চিরাগ। যার ফলে গোটা রাজ্যে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। যা দেখে চিরাগকে সসম্মানে ফের ২০২৩ সালে এনডিএতে স্বাগত জানায় বিজেপি। আর লোকসভা নির্বাচনের আগে আসন ভাগাভাগির সময় চিরাগ যেগুলোতে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফল প্রকাশের পর দেখা যায় হাজিপুরসহ সেই পাঁচটি আসন পারসকে সাইডলাইনে ফেলে জিতে নিয়েছেন রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে।
এবারের নির্বাচনে নিজের জামুই আসন ছেড়ে দিয়ে হাজিপুর থেকে লড়াই করতে নেমেছিলেন তিনি। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখা যায় সম্মানের এই লড়াই খুব সহজেই জিতে নিয়েছেন চিরাগ। বাবার রাজনৈতিক উত্তরসূরি যে তিনি তা এবারের লোকসভাতেই প্রমাণ করে দিয়েছেন চিরাগ। যা তাকে যেমন তৃতীয় এনডিএ সরকারের মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে সাহায্য করেছে তেমনি বিহারের নেতা থেকে উত্তোরণ ঘটিয়েছে জাতীয় স্তরে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিহারের হাজিপুর কেন্দ্র থেকে ৬ লক্ষ ১৪ হাজার ভোট পেয়ে জিতেছেন প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ।
তাসমিম