
সুদানের সংঘাত থেকে পালিয়ে যাওয়া লাখ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে
সুদানের সংঘাত থেকে পালিয়ে যাওয়া লাখ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভোগার ঝুঁকিতে রয়েছে। যা ইতোমধ্যেই খাদ্য সংকটে থাকা প্রতিবেশী দেশগুলোর পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর ইয়াহু নিউজের।
জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, প্রতিবেশী দেশে থাকা ৪০ লাখের বেশি সুদানি শরণার্থী আরও খাদ্য সংকটে পড়তে পারে। কারণ মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, মিসর, ইথিওপিয়া, লিবিয়া, উগান্ডা ও চাদে জীবন রক্ষাকারী খাদ্য সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন আগামী মাসগুলোতে কমে যেতে পারে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর অনুমান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সুদানের গৃহযুদ্ধে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে অনেকেই অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সুদানে যাদের থেকে গেছে, তাদের প্রায় অর্ধেক তীব্র খাদ্য সংকটে রয়েছে। দেশটির কিছু অঞ্চলে অপুষ্টিতে ভোগার কারণে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। সুদানের ডাক্তারদের নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, গত ছয় মাসে উত্তর দারফুর প্রদেশের রাজধানী আল ফাশেরে অপুষ্টির কারণে ২৩৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সংগঠনটি জানায়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকট এবং পুষ্টি গুদামগুলোতে বোমা হামলার কারণে এই শিশুরা মারা গেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও এর আধাসামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে উত্তেজনা রাজধানী খার্তুমে সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সংঘাত থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীরা দেশের সীমানা ছাড়িয়েও অপুষ্টিতে ভুগছে। ডব্লিউএফপির সুদান আঞ্চলিক সংকটের জরুরি সমন্বয়ক শন হিউজ বলেন, সুদান থেকে শরণার্থীরা প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে, কিন্তু সীমান্তের ওপারে গিয়েও তাদের নতুন করে ক্ষুধা, হতাশা ও সীমিত সহায়তার মুখে পড়তে হচ্ছে।
খাদ্য সহায়তা হচ্ছে তাদের জন্য বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। সুদানে খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়েছে। দারফুর ভিকটিমস সাপোর্ট অর্গানাইজেশন বুধবার ফেসবুকে ছবি প্রকাশ করে জানায়, দাতব্য রান্নাঘরের খাবার নিতে নাগরিকরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এই মানবিক পরিস্থিতির দিকে নজর দিতে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পথ খুলে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।
দারফুরভিত্তিক ওই সংস্থা জানিয়েছে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আল ফাশের শহরে ত্রাণ বিতরণের জন্য সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হলেও সোমবার সকালে শহরের দক্ষিণাংশে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ হয়েছে। আল ফাশের রেজিস্ট্যান্স কমিটি জানিয়েছে, টানা তৃতীয় দিনের মতো ভারি গোলাবর্ষণে শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকা ও পশুরহাট লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, এতে সাধারণ মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং মানবিক পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।