
ছবি: প্রতীকী
মানুষের শরীরে যখন কোনো সমস্যা হয়, তখন সেটা বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। কাশি একটি সাধারণ উপসর্গ হলেও, এটি যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে সেটি অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে এমন বার্তা দিতে পারে। অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি কাশি ফুসফুস ক্যান্সারেরও লক্ষণ হতে পারে। তবে শুধু কাশি হলেই যে তা ক্যান্সার হচ্ছে, তা বলা যায় না। কিন্তু এটি উপেক্ষা করাও ঠিক নয়। কারণ সময়মতো চিকিৎসা না নিলে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ ধীরে ধীরে শরীরে বিস্তার লাভ করে।
সাধারণত ঠান্ডা-জ্বর বা অ্যালার্জির কারণে অনেকেই কাশিতে ভোগেন। এগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যদি কাশি তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় স্থায়ী হয়, কিংবা দিনে দিনে আরও তীব্র হয়, তাহলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি কাশির সঙ্গে রক্ত আসে, ওজন কমে যায়, ক্ষুধা কমে যায়, কিংবা বুকে ব্যথা অনুভব হয়, তাহলে তা হতে পারে ফুসফুস ক্যান্সারের আগাম লক্ষণ।
ফুসফুস ক্যান্সার এক ধরনের মারাত্মক অসুখ, যা ফুসফুসের কোষগুলোতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে হয়ে থাকে। এই কোষগুলো ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে। যারা ধূমপান করেন বা অনেক বছর ধরে ধূমপানের অভ্যাস রয়েছে, তাদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে এমন অনেক রোগীও পাওয়া যায় যারা কখনও ধূমপান করেননি, তবুও তারা ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এর পেছনে থাকতে পারে বায়ুদূষণ, বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শ, বংশগত কারণ কিংবা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের প্রভাব।
ফুসফুস ক্যান্সারের শুরুর দিকে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু ধীরে ধীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। তার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি কাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। অনেক সময় রোগীরা ভাবেন, এটি সিজনাল সমস্যা বা ঠান্ডার কারণে হচ্ছে। ফলে তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দেরি করেন। এই দেরিই রোগটি জটিল করে তোলে। যদি শুরুতেই রোগ ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা শুরু হয়, তাহলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়ে।
দীর্ঘদিনের কাশিকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। অনেক সময় এটি ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, টিউবারকুলোসিস (যক্ষা) কিংবা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণেও হতে পারে। তবে যখন কোনো ওষুধে কাজ হচ্ছে না এবং কাশি দিনে দিনে বাড়ছে, তখন ফুসফুসের এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা ব্রংকোস্কোপির মতো পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যায় ফুসফুসে কোনো টিউমার, চাকা বা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়েছে কি না।
যদি পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে, তখন রোগের স্টেজ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অপারেশন, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে দেরি হলে এবং ক্যান্সার শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সময়ই এখানে সবচেয়ে বড় বিষয়।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। ধূমপান না করাই এর সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা। পাশাপাশি ধূমপায়ীদের সান্নিধ্যে কম থাকা, দূষিত বাতাস থেকে বাঁচা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করাও গুরুত্বপূর্ণ। যারা অতীতে ধূমপান করেছেন বা যারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন, তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত।
সবশেষে বলা যায়, দীর্ঘদিনের কাশি একটি ছোট উপসর্গ হলেও এর পেছনে থাকতে পারে ভয়ঙ্কর রোগ। তাই অবহেলা নয়, সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানোই বুদ্ধিমানের কাজ। সচেতন থাকলেই বড় বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
এম.কে.