ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

উপসর্গ ছাড়াই হতে পারে হার্ট অ্যাটাক! ঝুঁকিতে যারা, যেভাবে বুঝবেন আগাম লক্ষণ

প্রকাশিত: ১১:৩১, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৩২, ২৮ জুলাই ২০২৫

উপসর্গ ছাড়াই হতে পারে হার্ট অ্যাটাক! ঝুঁকিতে যারা, যেভাবে বুঝবেন আগাম লক্ষণ

ছবি: সংগৃহীত

হার্ট অ্যাটাক মানেই বুক চেপে ধরা ব্যথা বা হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়া নয়—অনেক সময় এটি ঘটে একেবারে নীরবে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় Silent Myocardial Infarction বা নীরব হৃদ্‌রোগ, যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো নাটকীয় লক্ষণ থাকে না। সম্প্রতি জাতীয় মেডিকেল লাইব্রেরি (NCBI) প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে, এ ধরনের হার্ট অ্যাটাকগুলো প্রায়ই ধরা পড়ে না এবং একসময় মারাত্মক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়।

নীরব হার্ট অ্যাটাক কীভাবে ঘটে?

হার্ট অ্যাটাক হয় যখন হার্টের কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় বা অত্যন্ত কমে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর পেছনে থাকে করোনারি আর্টারির ব্লকেজ, ফলে হার্টের পেশিতে অক্সিজেন পৌঁছায় না। অনেক সময় ব্যথা বা চাপের অনুভূতি না থাকায় রোগী বুঝতেই পারেন না, তার হৃদযন্ত্রে কী ঘটছে।

লক্ষণগুলো যেগুলো আমরা অবহেলা করি

নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের আগাম সংকেত হতে পারে, যেগুলো আমরা হালকাভাবে নিই—

  • বুকের মাঝখানে চাপ বা অস্বস্তি
  • শ্বাসকষ্ট
  • হঠাৎ ঘাম, বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরা
  • বাঁ হাতে, চোয়ালে বা পিঠে ব্যথা

কেন অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক বোঝা যায় না?

নীরব হার্ট অ্যাটাকে সাধারণত ক্লাসিক উপসর্গ থাকে না। ক্লান্তি, হজমের সমস্যা, বা হালকা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেগুলো আমরা সাধারণ অসুস্থতা বলে ভুল করি। বেশিরভাগ রোগী তাদের হার্ট অ্যাটাকের কথা জানতে পারেন তখনই, যখন তারা ইসিজি বা স্ট্রেস টেস্ট করান।

কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?

২০২৩ সালের ‘Myocardial Infarction’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, নিম্নোক্ত শ্রেণির মানুষরা নীরব হার্ট অ্যাটাকের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন—

  • নারী: যাদের উপসর্গ অনেক সময় হয় অস্পষ্ট ও ভিন্ন রকমের
  • বয়স্ক: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হার্ট দুর্বল হয়
  • ডায়াবেটিক রোগী: যাদের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যথা অনুভব কমে যায়
  • উচ্চ রক্তচাপের রোগী

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন:

উচ্চ কোলেস্টেরল সরাসরি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। রক্তনালিতে জমে গিয়ে এগুলো ব্লকেজ তৈরি করে।

সুস্থ জীবনযাপন করুন:

ব্যালান্সড ডায়েট, শারীরিক পরিশ্রম, ধূমপান বর্জন, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ভালো ঘুম—সবই গুরুত্বপূর্ণ।

নিয়মিত চেকআপ করান:

রক্তচাপ, রক্তে চিনির মাত্রা ও কোলেস্টেরল পর্যবেক্ষণ করুন। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আরও সতর্ক থাকুন।

মদ্যপান এড়িয়ে চলুন:

অতিরিক্ত অ্যালকোহল ট্রাইগ্লিসারাইড এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।

বিস্ময়কর পরিসংখ্যান

২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘Silent Myocardial Ischemia’ গবেষণা অনুযায়ী, করোনারি আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৭০-৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই উপসর্গবিহীন হার্ট অ্যাটাক ঘটে। মধ্যবয়সী পুরুষদের মধ্যে ২-৪ শতাংশে এই সমস্যা ধরা পড়ে ট্রেডমিল টেস্টে।

সব মিলিয়ে, হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে ২০-৩০ শতাংশই ঘটে নীরবে—যার প্রভাব পড়ে দীর্ঘমেয়াদে।

হার্ট অ্যাটাক সব সময় নাটকীয়ভাবে আসে না, বরং অনেক সময় নিঃশব্দে এসে দেহের ক্ষতি করে দেয়। তাই সতর্ক থাকুন, নিজের শরীরের সংকেত বুঝুন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান—বাঁচতে পারে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

 

রাকিব

×