ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

সকাল সকাল বমিভাব? শুধু গ্যাস্ট্রিক নয়, হতে পারে হার্টের সমস্যা!

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ২৬ জুলাই ২০২৫

সকাল সকাল বমিভাব? শুধু গ্যাস্ট্রিক নয়, হতে পারে হার্টের সমস্যা!

ছ‌বি: প্রতীকী

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই হঠাৎ বমিভাব বা বমি হলে আমরা সাধারণত ধরে নিই, এটা গ্যাস্ট্রিকের কারণে হচ্ছে। অনেকেই এমন সমস্যাকে গুরুত্ব না দিয়ে চা খেয়ে বা ওষুধ খেয়ে দিনের কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, এই সাধারণ মনে হওয়া বমিভাব গ্যাস্ট্রিক ছাড়াও আরও অনেক জটিল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে হার্টের সমস্যার একটি পূর্ব সংকেতও হতে পারে এই ভোরবেলার বমিভাব।

গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির কারণে বমিভাব হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। রাতের খাবার দেরিতে খাওয়া, ভারী খাবার খাওয়া, শোয়ার আগে অতিরিক্ত চা-কফি পান করা, অনিয়মিত ঘুম বা স্ট্রেসের কারণে অনেকেরই সকালে এসিড রিফ্লাক্স হয়। এর ফলে বুকে জ্বালাপোড়া, পেটে গ্যাস, মুখে টক পানি ওঠা বা বমিভাব হতে পারে। গ্যাস্ট্রিকজনিত এই সমস্যাগুলো একটু বিশ্রাম, সঠিক খাবার, ওষুধ বা চা দিয়ে কমে যায়। তাই অনেকেই এটাকে গুরুত্ব না দিয়ে দিনের কাজ শুরু করেন।

কিন্তু যদি আপনি বারবার সকালে উঠেই বমিভাব অনুভব করেন, অথবা হালকা মাথা ঘোরে, বুক ধড়ফড় করে, ঘাম হয় বা ক্লান্ত লাগে—তবে এটা শুধু গ্যাস্ট্রিক নয়, হতে পারে হার্টের কোনো অসুস্থতা। বিশেষ করে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা অতিরিক্ত ওজন রয়েছে, তাদের জন্য এটি হতে পারে হৃদরোগের পূর্বাভাস। হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে বসে পড়লেই যদি বমিভাব হয়, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়, তবে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

অনেকসময় হার্ট অ্যাটাক বা হৃদস্পন্দনের সমস্যা (Arrhythmia) শুরু হওয়ার আগেও শরীর এমনভাবে সংকেত দিতে পারে। সকালে শরীরে রক্তচলাচলের পরিবর্তন হয়, হার্ট তখন বেশি চাপ অনুভব করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাকই ঘটে সকাল ৫টা থেকে ১১টার মধ্যে। এ সময় শরীরের কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়ে, রক্ত ঘন হয়ে যায় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। ফলে যাদের হার্ট আগে থেকেই দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ।

আরও একটি বিষয় হলো—হৃদপিণ্ডের সমস্যায় অনেক সময় বুক ধড়ফড় করা, ঘাম হওয়া, পেটে চাপ বা অস্বস্তি, এমনকি জ্বর জ্বর ভাবও দেখা দেয়। নারী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো একটু ভিন্ন হতে পারে। তারা অনেক সময় বুকে তীব্র ব্যথা না পেয়ে হালকা বমিভাব, দুর্বলতা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। তাই এই ধরনের উপসর্গগুলোকে হালকা ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

আবার, অনেকে ভেবে নেন—যেহেতু রাতে ঠিকঠাক খেয়েছেন, ঘুমও হয়েছে, তাই সকালে বমিভাব মানেই এটা হজমের সমস্যা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীর আমাদের বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে আগে থেকেই সংকেত দেয়। হার্টের সমস্যা ধীরে ধীরে তৈরি হয়, এবং তার লক্ষণগুলোও শুরুতে অস্পষ্ট হয়। সকালে বমিভাব তার একটি হতে পারে।

তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিয়মিত রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার পরীক্ষা করানো, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, শরীরচর্চা করা ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। তবে সকালে বমিভাবের সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা, হাত ভারী লাগা বা ঘাড়ে চাপ অনুভব করেন, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, নিজের শরীরকে বুঝতে শিখুন। প্রতিদিন সকালে শরীর কেমন লাগছে, কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। শরীর আমাদের বন্ধু, সে আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়। সময়মতো সেই সংকেত বুঝে ব্যবস্থা নিলেই বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।

সুতরাং, শুধু গ্যাস্ট্রিক ভেবে সকালের বমিভাবকে অবহেলা করবেন না। এটা হতে পারে হৃদয়ের সংকেত— যেটা সময়মতো ধরা পড়লে জীবন বাঁচানো সম্ভব। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।

এম.কে.

×