ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

চিকিৎসকরাও থামাতে পারছেন না প্রাচীন ঘাতক, ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে

প্রকাশিত: ১৯:১৮, ১৬ জুলাই ২০২৫

চিকিৎসকরাও থামাতে পারছেন না প্রাচীন ঘাতক, ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর এক প্রাচীন সংক্রামক রোগ টাইফয়েড জ্বর আবারও দুনিয়াজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করছে। যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির (UKHSA) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে টাইফয়েড এবং প্যারাটাইফয়েড জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০২-এ পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি এবং দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এই রোগ মূলত স্যালমোনেলা টাইফি (Salmonella Typhi) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয় এবং দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়ায়। যদিও সংক্রমণের বড় অংশই বিদেশ থেকে আগত, তথাপি গবেষণায় উঠে এসেছে যে পাকিস্তানের মতো দেশে ওষুধ-প্রতিরোধী টাইফয়েড (ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টাইফয়েড) ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, যা চিকিৎসা আরও জটিল করে তুলছে।

প্রতি বছর আক্রান্ত ১.৩ কোটি, মৃত্যু ১.৩৩ লাখ

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ১.৩ কোটি মানুষ টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড A জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং মারা যায় প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। আক্রান্তদের বড় অংশই স্কুলপড়ুয়া শিশু, বিশেষত এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। উন্নত দেশগুলোতে যদিও এই রোগ এখন তেমন আলোচনায় আসে না, তবে বৈশ্বিক যোগাযোগের কারণে এটি আবারও একটি গুরুতর হুমকিতে পরিণত হচ্ছে।

২০২২ সালের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, টাইফয়েডের মূল ব্যাকটেরিয়া Salmonella enterica serovar Typhi (S. Typhi) দ্রুত ঔষধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। গবেষণায় ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের ৩,৪৮৯টি S. Typhi নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বহু পুরোনো অ্যান্টিবায়োটিক যেমন অ্যামপিসিলিন, ক্লোরামফেনিকল, ট্রাইমেথোপ্রিম-সালফামেথোক্সাজোল এমনকি নতুন প্রজন্মের ফ্লুরোকুইনোলোন ও সেফালোসপোরিনের প্রতিও এই ব্যাকটেরিয়া এখন আর সাড়া দিচ্ছে না।

বিশ্বজুড়ে ছড়াচ্ছে, পশ্চিমেও ধরা পড়ছে ‘টাইফয়েড সুপারবাগ

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এই প্রতিরোধী টাইফয়েড জীবাণু কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০টি আন্তর্জাতিক সংক্রমণের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে, যার বিস্তার ঘটেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকা এমনকি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো উন্নত দেশগুলোতেও।

গবেষকদের হুঁশিয়ারি

গবেষক দলের প্রধান এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডা. জেসন অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘S. Typhi-র ওষুধ প্রতিরোধী স্ট্রেইন যেভাবে দ্রুত ছড়াচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগের। এটি প্রমাণ করে, টাইফয়েড দমন এবং অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলাকে শুধু স্থানীয় নয়, বরং বৈশ্বিক ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’

সীমাবদ্ধতা ও আশঙ্কা

গবেষকরা অবশ্য স্বীকার করেছেন, সাব-সাহারান আফ্রিকা ও ওশেনিয়া অঞ্চলের নমুনা এখনো যথেষ্ট সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি, যেখানে টাইফয়েড ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। এছাড়াও যেসব দেশের পর্যবেক্ষণ তুলনামূলকভাবে ভালো, সেখানেও অধিকাংশ নমুনা এসেছে নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতাল বা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে, যা হয়তো পুরো অঞ্চলের সঠিক চিত্র তুলে ধরে না।

সমাধান কোথায়?

  • বিশ্বজুড়ে জিনগত নজরদারি (Genomic Surveillance) বাড়ানো
  • টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম বিস্তৃত করা
  • অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা
  • নিরাপদ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×