
ছবি: সংগৃহীত
টেস্টোস্টেরন মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা শরীরে বহু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে ভূমিকা রাখে। পুরুষদের ক্ষেত্রে, এই হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এটি পুরুষদের বৈশিষ্ট্যগত গঠনে সহায়তা করে। নারীর শরীরেও টেস্টোস্টেরন তৈরি হয়, তবে অনেক কম পরিমাণে।
টেস্টোস্টেরনের মূল ভূমিকার মধ্যে রয়েছে—
-
প্রজননক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ
-
পেশি বৃদ্ধিতে সহায়তা
-
চর্বি বিপাকক্রিয়া
-
রক্তকণিকা উৎপাদন
পুরুষ শিশুদের ভ্রূণের বয়স ৭ সপ্তাহ হলেই টেস্টোস্টেরন উৎপাদন শুরু হয় এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এর মাত্রা বাড়তে থাকে। কিশোর বয়স শেষে এটি সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায় এবং সাধারণত ৩০ বছর পার হওয়ার পর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। তবে বয়স ছাড়াও, কিছু বাহ্যিক কারণ যেমন—দূষণ, ঘুমের ঘাটতি, পুষ্টির অভাব, ইনসুলিন ভারসাম্যহীনতা ও অলস জীবনযাপন টেস্টোস্টেরন হ্রাসে ভূমিকা রাখে।
কম টেস্টোস্টেরনের লক্ষণ:
-
সবসময় ক্লান্তিভাব
-
অপ্রত্যাশিত ওজন বৃদ্ধি
-
মেজাজের পরিবর্তন
-
আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি
-
দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের লোম কমে যাওয়া
-
হাড় দুর্বল হওয়া
-
যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া
এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নির্ধারণ করা উচিত।
টেস্টোস্টেরন বাড়ানোর প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায়
১. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম টেস্টোস্টেরন বাড়ানোর অন্যতম প্রধান উপায়। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরে হরমোন ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।
২. মদ্যপান কমান বা এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে এবং টেস্টিসের কার্যকারিতা কমায়। ফলে মদ্যপান নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
৩. ভিটামিন ডি গ্রহণ করুন
ভিটামিন ডি'র ঘাটতি শরীরে টেস্টোস্টেরন হ্রাসের অন্যতম কারণ। নিয়মিত রোদে থাকা বা ডি৩ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে এ ঘাটতি পূরণ করা যায়।
৪. জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খান
জিঙ্কের অভাবে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়। মেনুর মধ্যে ডিম, গোশত, বাদাম ইত্যাদি জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার রাখলে উপকার মিলবে।
৫. ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি থাকলে টেস্টোস্টেরন কমে যেতে পারে। পালংশাক, কাজু, ডার্ক চকলেট, শুকনো ফল প্রভৃতি খাবার খাওয়া যেতে পারে।
৬. চাপ এড়িয়ে চলুন
মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসল হরমোন বাড়ায়, যা টেস্টোস্টেরনের বিপরীত কাজ করে। তাই চাপ কমাতে মেডিটেশন বা ব্যায়াম করুন।
৭. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা হরমোন উৎপাদনে বাধা দেয়। হাঁটা, দৌড়, ওয়েট ট্রেনিং ইত্যাদি নিয়মিত করলে টেস্টোস্টেরন বাড়ে।
৮. বিপিএ (BPA) এড়িয়ে চলুন
বিপিএ হলো এক ধরনের রাসায়নিক যা প্লাস্টিকজাত পণ্যে পাওয়া যায়। এটি হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। তাই BPA-free পণ্য বেছে নেওয়া ভালো।
৯. স্বাস্থ্যকর চর্বি খান
ফ্যাট মানেই খারাপ নয়। বাদাম, অ্যাভোকাডো, মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে ভালো চর্বি সরবরাহ করে যা হরমোন উৎপাদনে সহায়ক।
১০. ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিন
বয়সভিত্তিক টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে যদি মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, সেক্ষেত্রে ডাক্তার অনুমোদিত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
টেস্টোস্টেরন কেবল যৌন হরমোন নয়, এটি পুরুষদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি কমলেও, অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে তা নানা স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা জরুরি।
আবির