ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস: মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি ও করণীয়

প্রকাশিত: ২১:৪৭, ১০ জুলাই ২০২৫

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস: মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকি ও করণীয়

ছবি: সংগৃহীত

গর্ভাবস্থা একদিকে যেমন এক নারীর জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা, অন্যদিকে তা হয়ে উঠতে পারে বেশ জটিল, যদি সঙ্গে থাকে ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখ। বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে তা মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে আশার কথা হলোসচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো যায়।

ডায়াবেটিসের ধরন ও প্রভাব

গর্ভাবস্থায় মূলত তিন ধরনের ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত আগে থেকেই বিদ্যমান থাকে, তবে অনেক সময় গর্ভাবস্থার শুরুতেই তা ধরা পড়ে। তৃতীয় ধরনটি হলো জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস, যা গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময়ে দেখা দেয় এবং প্রসবের পর অনেক সময়ই সেরে যায়।

এই তিনটি অবস্থাই গর্ভকালীন সময়কে জটিল করে তুলতে পারে। রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকলে গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। দেখা দিতে পারে জন্মগত ত্রুটি, অতিরিক্ত ওজন (ম্যাক্রোসোমিয়া), এমনকি প্রসবের সময় জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে।

গর্ভবতী নারীর জন্য সম্ভাব্য জটিলতা

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া, সংক্রমণ বা কিডনি ও চোখের জটিলতা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, নবজাতকের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার ঘাটতি), শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস এমনকি ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও।

এই অবস্থায় অনেক সময় বেশি পরিমাণে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড জমে যায়, যাকে বলা হয় পলিহাইড্রাম্নিওস। ফলে প্রসব আগেই শুরু হয়ে যেতে পারে বা সিজারিয়ান ডেলিভারির প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা ও জীবনধারার পরিবর্তনই সমাধান

চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিস থাকলেও একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা সম্ভব, যদি নিয়ম মেনে চলা যায়। এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন রক্তে শর্করার মাত্রা প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা করা। সুষম ও সময়মতো খাদ্যাভ্যাস, যেমন পূর্ণ শস্য, প্রোটিন ও শাকসবজি খাওয়ারক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

একই সঙ্গে হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা বা প্রি-নেটাল যোগব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে যাঁদের ঝুঁকি বেশি, তাঁদের ইনসুলিন বা ওষুধের পরিমাণ চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়ানো বা কমানো হতে পারে।

প্রসব ও পরবর্তী পরিকল্পনা

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে গর্ভবতী নারীকে নিজের গ্লুকোজ মাত্রা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রসবের সময় শিশুর গ্লুকোজ মাত্রা পরিমাপ করা জরুরি। সিজারিয়ান ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকলে আগে থেকেই প্রস্তুতি রাখা ভালো এবং এমন হাসপাতালে ডেলিভারি করাই নিরাপদ, যেখানে নবজাতকের জন্য উন্নত নিওনেটাল কেয়ার সুবিধা রয়েছে।

যাঁদের গর্ভাবস্থায় জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাঁদের সন্তান জন্মের পরও নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আর যাঁদের টাইপ ১ বা ২ ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের পরবর্তী গর্ভধারণের আগে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং তা মোকাবিলায় প্রয়োজন সময়মতো পরীক্ষা, সঠিক চিকিৎসা ও জীবনধারায় পরিবর্তন। এই বিষয়ে প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, ডায়েটেশিয়ান ও ডায়াবেটিস পরামর্শকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা মানেই শুধু সুস্থ সন্তান নয়, এক সুস্থ আগামীরও আশ্বাস।

 

সূত্র: https://www.onlymyhealth.com/how-to-deal-with-diabetic-health-conditions-during-pregnancy-12977834732

রাকিব

×