
ছবি: সংগৃহীত
আপনার খাদ্যাভ্যাসে কিছু নির্দিষ্ট খাবার যোগ করে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করা সম্ভব। বিশেষ করে, ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এমন খাবার গ্রহণ করলে রক্তনালিতে জমাট বাঁধা অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
বিভিন্ন খাবার বিভিন্ন উপায়ে কোলেস্টেরল কমায়। কিছু খাবারে থাকে দ্রবণীয় আঁশ, যা হজম প্রক্রিয়ার সময় কোলেস্টেরল এবং তার পূর্বধারাগুলোকে আবদ্ধ করে শরীর থেকে বের করে দেয়। কিছু খাবারে থাকে পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা সরাসরি এলডিএল কোলেস্টেরল কমায়। আবার কিছু খাবারে থাকে প্ল্যান্ট স্টেরল ও স্ট্যানল, যা শরীরের কোলেস্টেরল শোষণ প্রতিরোধ করে।
১. ওটস: কোলেস্টেরল কমানোর সহজ একটি উপায় হলো সকালে ওটমিল বা ঠান্ডা ওট-ভিত্তিক সিরিয়াল খাওয়া। এটি ১ থেকে ২ গ্রাম দ্রবণীয় আঁশ সরবরাহ করে। এর সাথে একটি কলা বা কিছু স্ট্রবেরি যোগ করলে আরও অর্ধ গ্রাম আঁশ পাওয়া যায়। পুষ্টিবিদদের মতে, দৈনিক ২০ থেকে ৩৫ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করা উচিত, যার মধ্যে অন্তত ৫ থেকে ১০ গ্রাম হওয়া উচিত দ্রবণীয় আঁশ। অথচ বেশিরভাগ মানুষ তার অর্ধেকই গ্রহণ করে থাকেন।
২. বার্লি এবং অন্যান্য সম্পূর্ণ শস্য: ওটস এবং ওট ব্র্যানের মতোই বার্লি এবং অন্যান্য হোল গ্রেইন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, মূলত এদের দ্রবণীয় আঁশের জন্য।
৩. বিনস (ডালজাতীয় খাবার): বিনস-এ প্রচুর দ্রবণীয় আঁশ থাকে। এগুলো হজম হতে সময় নেয়, ফলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। এ কারণে ওজন কমাতে চাওয়া মানুষের জন্য এটি উপকারী। নানা ধরণের বিনস — যেমন নেভি, কিডনি, লেন্টিল, চানা, কালো ছোলা ইত্যাদি — নানা উপায়ে রান্না করা যায়, যা একে খুবই বহুমুখী খাবার করে তোলে।
৪. বেগুন ও ঢেঁড়স: এই দুটি কম ক্যালোরিযুক্ত সবজিতে আছে ভালো পরিমাণ দ্রবণীয় আঁশ।
৫. বাদাম: অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, আমন্ড, আখরোট, চিনাবাদামসহ অন্যান্য বাদাম হৃদয়ের জন্য উপকারী। দৈনিক ২ আউন্স বাদাম খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। এছাড়াও বাদামে হৃদয় রক্ষায় সহায়ক নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
৬. ভেজিটেবল অয়েল: রান্নায় বা খাবারে মাখনের বদলে ক্যানোলা, সানফ্লাওয়ার, স্যাফফ্লাওয়ার ইত্যাদি তরল উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করলে এলডিএল কমে।
৭. আপেল, আঙুর, স্ট্রবেরি, লেবুজাতীয় ফল: এসব ফলে থাকে পেকটিন নামক দ্রবণীয় আঁশ, যা এলডিএল কমাতে সাহায্য করে।
৮. স্টেরল ও স্ট্যানলযুক্ত খাবার: উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত স্টেরল ও স্ট্যানল শরীরের কোলেস্টেরল শোষণ বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য যেমন মার্জারিন, গ্রানোলা বার, কমলালেবুর রস, এমনকি চকোলেটেও এসব উপাদান যোগ করা হচ্ছে। এগুলো সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও পাওয়া যায়। প্রতিদিন ২ গ্রাম প্ল্যান্ট স্টেরল বা স্ট্যানল গ্রহণ করলে এলডিএল প্রায় ১০ শতাংশ কমানো সম্ভব।
৯. সয়া: সয়াবিন এবং সয়া থেকে তৈরি খাবার যেমন টোফু বা সয়া দুধ একসময় কোলেস্টেরল কমানোর জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এর প্রভাব কিছুটা মাঝারি — দৈনিক ২৫ গ্রাম সয়া প্রোটিন (যেমন ১০ আউন্স টোফু বা আড়াই কাপ সয়া দুধ) গ্রহণ করলে এলডিএল প্রায় ৫-৬ শতাংশ কমতে পারে।
১০. চর্বিযুক্ত মাছ: সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মাছ খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল কমে। কারণ এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ট্রাইগ্লিসারাইড কমায় এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
১১. আঁশ সাপ্লিমেন্ট: আঁশ সাপ্লিমেন্ট হলো দ্রবণীয় আঁশ গ্রহণের কম আকর্ষণীয় পদ্ধতি। প্রতিদিন ২ চা চামচ সাইলিয়াম (যেমন মেটামুসিল)-এ প্রায় ৪ গ্রাম দ্রবণীয় আঁশ পাওয়া যায়।
কোলেস্টেরল কমাতে খাদ্য পরিকল্পনা
যেমন অর্থ বিনিয়োগে নানা উৎসে বিনিয়োগ নিরাপদ মনে করা হয়, তেমনি খাদ্যাভ্যাসেও একাধিক রকমের উপকারী খাবার গ্রহণ করা অধিক কার্যকর। কেবল একটি বা দুটি খাবারের উপর নির্ভর না করে, বিভিন্ন ধরণের খাবার একত্রে গ্রহণ করলেই কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।
আবির