
ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে প্রকৃতিকন্যা মাধবকু- জলপ্রপাতে বিনোদনপ্রেমিদের ভিড়
ঈদুল আজহার ছুটি প্রায় শেষের পথে। তাই এ ছুটিতে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় ভিড় করেছেন সব বয়সী মানুষ। কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে। কেউবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। কেউ এসেছেন ছায়াঘেরা এই প্রাণিরাজ্যে গরমে একটু প্রশান্তির খোঁজে। গাছের ছায়ায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখি দেখছেন তারা।
বৃহস্পতিবার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছে অনেকে। ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে আবার চিড়িয়াখানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা হকারদের কাছ থেকে কিনছেন বাঁশি, ময়ূরের পালক ও ফুলসহ নানান রকম খেলনা। ঈদের ছুটিতে যানজটমুক্ত রাজধানীতে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে স্বস্তি নগরবাসীর। শিশু-কিশোরদের আবদার মেটাতে জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসছেন অনেকে। নানা প্রজাতির প্রাণীর দেখা পাওয়ার পাশাপাশি স্বস্তি মিলছে গাছের ছায়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে।
সাভার নবীনগর থেকে ৯ বছরের ছেলে আলিফকে নিয়ে এসেছেন আফসার-ফাতেমা দম্পতি। আফসার উদ্দিন বলেন, আমার ভাইয়ের বাসা আদাবরে। চিড়িয়াখানায় আসার পরিকল্পনা করেই গতকাল ঢাকায় এসেছি। আজকে চিড়িয়াখানায় এলাম। বাচ্চাকে পশু-পাখি দেখাতে। রাতে আবার ফিরে যাব।
গাজীপুর থেকে আসা দর্শনার্থী সিরাজুল মিয়া বলেন, মেয়েকে চিড়িয়াখানা দেখাতে কাপাসিয়া থেকে এসেছি। অনেক পশুপাখি আছে, মেয়েকে সেগুলোর নামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাবে।
প্রচ- রোদে খানিকটা অসুবিধার কথা জানান এক দর্শনার্থী। দুই বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে আসা ওই দর্শনার্থী বলেন, ছেলের আবদার মেটাতে তাকে বানর-হাতি-বাঘ দেখতে চিড়িয়াখানায় এসেছি। কিন্তু প্রচ- রোদে খুব একটা ঘুরতে পারিনি। কয়েকটি খাঁচা ঘুরে বের হয়ে এসেছি।
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধার বিষেয়ে নানান পদক্ষেপের কথা জানান জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার। তিনি বলেন, দর্শনার্থীরা যাতে সুন্দর ও নিরাপদে চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা কর্মীর পাশাপাশি পুলিশ রয়েছে। দর্শনার্থীরা ১৮টি ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে পারছেন। পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
উৎমাছড়ায় উপচেপড়া ভিড় ॥ সিলেট অফিস থেকে সালাম মশরুর জানান, অনেকটা আড়ালে থাকা পর্যটন স্পট উৎমাছড়ায় এখন উপচেপড়া ভিড়। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তে পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া এলাকায় গত দুদিন যাবৎ পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
গত রবিবার ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে উৎমাছড়ায় আসা পর্যটকদের ফিরিয়ে দেওয়া, এই পর্যটনকেন্দ্র ‘বন্ধ ঘোষণা’ করা ও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার বিষয়টি প্রচারণায় আসার পর উৎমাছড়া নিয়ে পর্যটকদের আগ্রহ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেটে ভ্রমণরত অধিকাংশ পর্যটক এবার ছুটছেন উৎমাছড়ায়। ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা পাহাড়ের কুল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদীর স্বচ্ছ জলরাশি ও চোখ জুড়ানো পাহাড়ের সবুজবন নজর কাড়ছে সকলের। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় স্থানটির পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তেমন পরিচিতি ছিল না। মূলত, উৎমা একটি পাথর কোয়ারি এলাকা ছিল। এই ছড়া দিয়ে ভারত থেকে পাথর আসত। তা কুড়িয়ে বিক্রি করে স্থানীয় বাসিন্দারা জীবিকা নির্বাহ করত। কয়েক বছর ধরে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সেখানে পাথর জমে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের অবতারণা হয়। ফলে, পর্যটকদের আনাগোনা বাড়তে থাকে।
ঈদুল আজহার আগের দিন গত শুক্রবার ওই এলাকার ‘তৌহিদী জনতা’ বৈঠক করে ফেসবুকে উৎমাছড়া ও কুলিছড়ায় (তুরুং) পর্যটকদের যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধের ঘোষণা করে। তারা ঈদ উপলক্ষে উৎমাছড়া ও কুলিছড়ায় (তুরুং) কোনো ধরনের পর্যটকের না আসার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানায়। কিন্তু ঈদুল আজহার দিন থেকে পর্যটকদের আগমন ঘটতে থাকে উৎমা ও তুরুংছড়ায়। পরদিন রবিবার বিকেলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা উৎমাছড়া থেকে পর্যটকদের উঠে আসার জন্য বলেন। ছড়ায় আর কাউকে না যাওয়ার জন্যও অনুরোধ করেন। এসব কর্মকা-ের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় নেতিবাচক আলোচনা-সমালোচনা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের উৎমাছড়ায় এসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে উৎসাহিত করছি। ‘অনাকাক্সিক্ষত’ ওই ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো অভিযোগ আসেনি। গত দুদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছেন।’ আজিজুন্নাহার জানান, ‘আমাদের কাছে বলেছেন, তারা নেহাত ধর্মপ্রচার করতেই সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের এটা আসলে যেভাবে উপস্থাপন হয়েছে, সেটা তারা ওইভাবে করতে চান নাই। যদিও তাদের বক্তব্যের সঙ্গে প্রকাশিত ভিডিওর সত্যতা নাই। তবে তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন। ভবিষ্যতে এ রকম কিছু হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। যদি এ রকম কিছু হয়, তাহলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।
পর্যটকের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। তাছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং স্থানীয়রা এসব বিষয়ে সচেতন থাকবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’