ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফিরছে কোভিড আতঙ্ক! নতুন ভ্যারিয়েন্ট NB.1.8.1 নিয়ে উদ্বেগ, যেসব উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন এখনই!

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ২৭ মে ২০২৫; আপডেট: ০৯:৪৯, ২৭ মে ২০২৫

ফিরছে কোভিড আতঙ্ক! নতুন ভ্যারিয়েন্ট NB.1.8.1 নিয়ে উদ্বেগ, যেসব উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন এখনই!

কোভিড-১৯ ভাইরাসের একটি নতুন ধরন, যার নাম NB.1.8.1, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছে। চীনে হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ার পর এ ভ্যারিয়েন্টটি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মার্কিন সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের শরীরে নতুন এ ধরনটির অস্তিত্ব ধরা পড়েছে।

 

ভ্যারিয়েন্টটির বিস্তার কোথায় কতটা?
শুধু আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মধ্যেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি এলাকায় স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে, যা এই ধরনটির সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দেয়।এশিয়ার কিছু অঞ্চলে NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। চীনে গত এক মাসে গুরুতর শ্বাসজনিত সমস্যায় ভোগা কোভিড রোগীর হার ৩.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৩ শতাংশে। জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের কোভিড পজিটিভ হারও বেড়ে হয়েছে ১৬.২ শতাংশ, যা আগে ছিল ৭.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, তাইওয়ানে কোভিডজনিত হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ।

হংকংয়ে এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে রোগী ভর্তি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ আবারও গণপরিবহন ও ভিড়যুক্ত স্থানে মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্টটি মানবদেহের কোষের সঙ্গে আরও বেশি দক্ষতায় যুক্ত হতে পারে, যা সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তবে এটি আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় বেশি ভয়াবহ কিংবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফাঁকি দিতে পারে এমন কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

 

যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে ছড়াল NB.1.8.1?
যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হওয়া NB.1.8.1-এর বেশিরভাগ সংক্রমণ এসেছে যেসব দেশের ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে, সেগুলো হলো: চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও স্পেন। ২২ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত বিমানবন্দরে স্বেচ্ছায় নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে এ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা হয়।

ওহাইও, রোড আইল্যান্ড ও হাওয়াইসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি রাজ্যে NB.1.8.1 শনাক্ত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া ও ওয়াশিংটনে মার্চ-এপ্রিলে শনাক্তকৃত কয়েকটি কেসকেও এই তালিকায় ধরা হচ্ছে। তবে নতুন শনাক্ত হলেও সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড পরীক্ষায় পজিটিভ কেসের সংখ্যা ১২ শতাংশ কমে গেছে।

 

NB.1.8.1 এর প্রাথমিক উপসর্গ
NB.1.8.1 আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর-এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে এর কিছু উপসর্গ আগের তুলনায় ভিন্ন হতে পারে।

চীনের গবেষকদের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এ ভ্যারিয়েন্টটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দক্ষ না হলেও, এটি মানব কোষে দ্রুত সংযুক্ত হতে পারে, যা একে বেশি সংক্রামক করে তুলতে পারে।

নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেসব উপসর্গে ভুগছেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

নিম্ন-মাত্রার দীর্ঘস্থায়ী জ্বর: উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর না থাকলেও, অনেকের শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৬ থেকে ৩৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যা ঘাম বা শ্বাসকষ্ট ছাড়াই ঘটে। এ অবস্থাকে হাইপারথারমিয়া বলা হয়।

উপরের শ্বাসনালির উপসর্গ: গলা ব্যথা, কাশি, সর্দি ও মৃদু জ্বর—যা ওমিক্রনের অন্যান্য সাবভ্যারিয়েন্টের সঙ্গেও দেখা যায়।

পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা: অনেকেই খাবারে অনীহা, বমি বমি ভাব বা পেটের অস্বস্তির অভিযোগ করেছেন।

স্নায়বিক উপসর্গ: মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, মনোযোগে ঘাটতির মতো সমস্যাও দেখা যাচ্ছে।

চরম ক্লান্তি ও দুর্বলতা: দৈনন্দিন কাজেও অনেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করছেন।

ঘুমের ব্যাঘাত ও মানসিক চাপ: যুক্তরাজ্যে NB.1.8.1-এর ঘনিষ্ঠ একটি ভ্যারিয়েন্ট JN.1 আক্রান্তদের মধ্যে উদ্বেগ ও ঘুমের সমস্যার তথ্য পাওয়া গেছে।

 

প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ ও পরামর্শ
NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়াতে পারে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে। এ কারণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন:

টিকাদান: সর্বশেষ টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ করে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

মাস্ক পরা: ভিড় বা বন্ধ জায়গায় মাস্ক ব্যবহার ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে সাহায্য করে।

হাত ধোয়া: নিয়মিত সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে।

উপসর্গ মনিটরিং: সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আইসোলেশন: উপসর্গ থাকলে অন্যদের রক্ষা করতে নিজেকে আলাদা রাখা জরুরি।


NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সতর্কতা। এখনই পর্যাপ্ত তথ্য না থাকলেও, এর সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই সময়মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপসর্গ নজরে রেখে সচেতন থাকাই হতে পারে এই ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলার সেরা উপায়।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/4zwnh43m

আফরোজা

×