
ছবিঃ সংগৃহীত
ইস্ট্রোজেন হরমোনের স্তর কমে যাওয়ায় শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে—রক্তচাপ বাড়ে, কোলেস্টেরল বাড়ে, প্রদাহ হয়, এমনকি শরীরে চর্বি জমার ধরণও বদলে যায়। এর ফলে রক্তনালিতে জমতে থাকে প্লাক, যা শেষ পর্যন্ত হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
অনেক দিন ধরেই হরমোন থেরাপি মেনোপজজনিত উপসর্গ (যেমন হট ফ্ল্যাশ, রাতের ঘাম, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি) লাঘবের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ২০০২ ও ২০০৪ সালের কিছু গবেষণা এই চিকিৎসা পদ্ধতির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে—বিশেষ করে হৃদরোগের ক্ষেত্রে। এর ফলে চিকিৎসকরা হরমোন থেরাপি দেওয়া বন্ধ করে দেন এবং চিকিৎসা নির্দেশিকাও বদলে যায়।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যদি সুস্থ নারীরা ৬০ বছর হওয়ার আগেই এবং মেনোপজ শুরু হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে হরমোন থেরাপি শুরু করেন, তাহলে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
কেন এই পরিবর্তন?
এস্ট্রোজেন হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির জন্য একটি রক্ষাকবচের মতো কাজ করে। এটি রক্তনালিকে নমনীয় রাখে, রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখতে সাহায্য করে, এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে—যার ফলে রক্তনালিতে প্লাক জমে না। কিন্তু মেনোপজের পর এসব রক্ষাকবচ কমে যায়, ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
হরমোন থেরাপি নিয়ে বিভ্রান্তি কোথায়?
১৯৭০-এর দশকে এই থেরাপিকে "যৌবন ধরে রাখার ওষুধ" বলা হতো। কিন্তু ২০০০-এর দশকের শুরুতে উইমেনস হেলথ ইনিশিয়েটিভের একটি বিশাল গবেষণা জানায়, হরমোন থেরাপিতে স্ট্রোক ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এই গবেষণার ফলে চিকিৎসকরা দ্রুত থেরাপি দেওয়া বন্ধ করে দেন।
পরবর্তী বিশ্লেষণে দেখা যায়, হরমোন থেরাপির ঝুঁকি ও সুবিধা নির্ভর করে এটি কখন শুরু করা হচ্ছে তার ওপর। এই তত্ত্বকে বলা হয় "টাইমিং হাইপোথিসিস"।
টাইমিং হাইপোথিসিস কী বলে?
যদি হরমোন থেরাপি শুরু করা হয় ৬০ বছরের আগে এবং মেনোপজ শুরু হওয়ার ১০ বছরের মধ্যে, তাহলে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
তবে ৬০ বছরের পরে বা অনেক দেরিতে শুরু করলে ঝুঁকি বাড়ে—বিশেষ করে রক্ত জমাট বাঁধা, স্ট্রোক ইত্যাদির।
গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী ৬০ বছরের নিচে হরমোন থেরাপি শুরু করেছেন, তাদের মৃত্যুঝুঁকি ও হৃদরোগে মৃত্যুর হার কম। তবে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি এক্ষেত্রেও কিছুটা ছিল এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে তা আরও বাড়ে।
এছাড়াও দেখা গেছে, হরমোন থেরাপির ধরণও ঝুঁকির ওপর প্রভাব ফেলে। মুখে খাওয়া বড়ির তুলনায় ত্বকে লাগানো প্যাচ বা জেল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ—কারণ মুখে খেলে ওষুধ প্রথমে লিভারে যায় এবং লিভার তখন জমাট বাঁধার উপাদান তৈরি করে।
সবাই কি হরমোন থেরাপি নিতে পারবেন?
না। যাদের আগে থেকেই হৃদরোগ আছে, স্ট্রোক হয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার ইতিহাস আছে, গলব্লাডারের রোগ আছে বা কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার রয়েছে, তাদের জন্য হরমোন থেরাপি ঝুঁকিপূর্ণ।
ব্যক্তিভিত্তিক চিকিৎসাই সবচেয়ে উপযুক্ত
সর্বজনীনভাবে হরমোন থেরাপি নেওয়া উচিত হবে না বা নিষেধও করা উচিত নয়। বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা ও মেনোপজের সময় বিবেচনায় নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা পরিকল্পনা নেওয়াই সঠিক পন্থা।
হরমোন থেরাপি নেওয়ার আগে যেসব প্রশ্ন করা উচিত:
- আমার স্বাস্থ্য ইতিহাস অনুযায়ী আমি কি হরমোন থেরাপির উপযুক্ত প্রার্থী?
- এই বয়সে থেরাপি নেওয়ার সুবিধা ও ঝুঁকি কী?
- পিল, প্যাচ না জেল—কোনটি আমার জন্য ভালো?
- কতদিন থেরাপি চালিয়ে যেতে হবে?
এই প্রতিবেদনটি আপনাকে হরমোন থেরাপি সম্পর্কে আরও সচেতন করতে চায়—বিশেষ করে মেনোপজ-পরবর্তী হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে হলে কোন পথে হাঁটা উচিত তা বুঝতে। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মারিয়া