ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অবৈধ ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে গ্রেফতার ১

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার।।

প্রকাশিত: ১১:২০, ২৯ মে ২০২৫

অবৈধ ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে গ্রেফতার ১

কক্সবাজার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়ে এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে। তবে অভিযুক্ত জেলা পরিষদের নিম্নমান সহকারী রেজাউল করিম পালিয়ে যান। এই ঘটনায় দুদক বুধবার রাতে কক্সবাজার সদর থানায় দুইজনের নামে মামলা দায়ের করেছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীর পিএস ও বর্তমান জেলা পরিষদের নিম্নমান সহকারী রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম, দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা, পরিষদের কর্মচারী হত্যায় জড়িত থাকা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক জেলা পরিষদের সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য রেহেনা খানম রাহু ভুক্তভোগীদের পক্ষে কক্সবাজার সেনা ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসার বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেন। তার বিরুদ্ধে এমন পাহাড়সম অভিযোগ জমা হয়েছে।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুই বছর পর পর বদলির বিধান থাকলেও, দুর্নীতিবাজ রেজাউল করিম এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে একই কর্মস্থলে বহাল রয়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, উখিয়া জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে বরাদ্দ দেওয়া ১৪টি দোকান ঘরের জন্য প্রতি দোকানের বিপরীতে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। অথচ এই টাকার মোট ১৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকা রেজাউল করিম জেলা পরিষদের কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের হেফাজতে রেখে দেন।

উখিয়ার ফলিয়াপাড়া এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র জাহাঙ্গীর কবির জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে দোকান বরাদ্দের আবেদন করেন এবং ডাকবাংলোর ৭নং দোকান বরাদ্দ পান। তিনি সোনালী ব্যাংক উখিয়া শাখার মাধ্যমে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এমন আরও ১৪ জনের আবেদন রেজাউল করিম আটকে রেখেছেন।

টেকনাফে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন পুরাতন সুপার মার্কেটের দোকান নবায়নের অভিযোগ তদন্তে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

২০১৯ সালের ৯ এপ্রিলের মাসিক সভার সিদ্ধান্ত ও ৬ মে ২০১৯ তারিখের স্মারক নম্বর ১৬৪(৬) অনুযায়ী গঠিত কমিটি ১৫ মে টেকনাফ গিয়ে তদন্ত করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, রেজাউল করিম তৎকালীন টেকনাফ মডেল থানার এসআই নুরুল ইসলামের মাধ্যমে দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্ধারিত বর্ধিত ফি জমা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনটি তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে জমা দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদের ১৮ জন সদস্য স্বাক্ষরিত এক অভিযোগপত্রে জনস্বার্থে ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে রেজাউল করিমকে বদলির অনুরোধ জানানো হয়।

চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের মাশুক আহমদের পুত্র বেলাল উদ্দিন ভুট্টো চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনাল ও হারবাং বাজারস্থ পরিষদের জমি লিজ দেওয়ার নামে রেজাউল করিমকে ৩ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ৬ মে ও ৮ জুন দুই দফায় এ টাকা প্রদান করা হয়।

জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন উপজেলার যাত্রী ছাউনির দোকান সরকারি নীতিমালা ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কেবল আবেদনের ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সদর ডাকবাংলো সংলগ্ন মার্কেটের ২টি দোকানসহ প্রায় ৭০টি দোকান আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য নিয়ন্ত্রণ করছে, যার ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

রেজাউল করিম সিন্ডিকেট প্রতি বছর জাতীয় দিবসে আলোকসজ্জা ও ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে সরকারের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। কলাতলী লাবণী পয়েন্টে ডমিনোজ পিজার বকেয়া আদায় না করে পূর্বের তারিখ দেখিয়ে বেআইনিভাবে নথিতে স্বাক্ষর করে নগদ ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন।

২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের তদন্তপূর্বক শাস্তি ও বদলির জন্য দুদক চট্টগ্রাম উপ-পরিচালকের বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
 

সজিব

×