ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৩০ মে ২০২৫

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ

হালদা নদীতে আবারও ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় মা মাছ। উৎসবমুখর পরিবেশে গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে ২০ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির গড়দুয়ারা, নয়াহাট, সিপাহীঘাট, মাছুয়াঘোনা, আজিমারঘাট, ঝোরারমুখ, কেরামতলি, নাপিতেরঘাট, আমতুয়া, কাগতিয়ার টেক, মদুনাঘাট, রামদাস মুন্সিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় একযোগে মা মাছ ডিম ছেড়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে নমুনা ডিমের আলামত পাওয়া গেলে রাতে শুরু হয় পুরোদমে ডিম ছাড়ার প্রক্রিয়া। রাত ২টা ৪০ মিনিট থেকে শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এই প্রাকৃতিক প্রজননের মহোৎসব।

ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা ও সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে নেমে পড়েন। প্রায় ৩৫০–৪০০ নৌকায় ৫০০–৬০০ সংগ্রাহক ডিম আহরণে অংশ নেন। অনেকে প্রতি নৌকায় ৪-৫ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন।

ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার পর থেকেই মা মাছ ডিম ছেড়েছে। আমার ১০টি নৌকায় প্রায় ৩৫ বালতি ডিম সংগ্রহ হয়েছে। পরিমাণ আশানুরূপ।”

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে জোয়ারের সময় হালদার আমতুয়া অংশে মা মাছ ডিম দেয়। যারা প্রাথমিকভাবে নদীতে ছিলেন, তারা বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এখন ডিমগুলো হ্যাচারিতে ফুটানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংগ্রাহকরা।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, “এবার গত কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ডিম সংগৃহীত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় ডিম আহরণকারীরা প্রতি নৌকায় ৪-৫ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। তবে কিছু এলাকায় ভোরের দিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাময়িক বিঘ্ন ঘটলেও সামগ্রিক চিত্র সন্তোষজনক।”

এদিকে, সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে হালদায় পানির উচ্চতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এতে দক্ষিণ মাদার্শা, মদুনাঘাট, গড়দুয়ারা এলাকায় বাড়িঘরের উঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। নদীর এই পানিতে কিছুটা লবণাক্ততা থাকায় রেনু ফোটার সক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডিম সংগ্রাহক আশু বড়ুয়া।

উল্লেখ্য, গত বছর (২০২৪ সালে) হালদা নদী থেকে মাত্র ১,৬৮০ কেজি ডিম সংগৃহীত হয়েছিল। এবারের ২০ হাজার কেজি ডিম আহরণকে ইতিবাচক ফলাফল হিসেবে দেখছেন গবেষক ও মৎস্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

মিমিয়া

×