ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শিশু ও বড়দের হাঁপানি

ডা. খায়রুল আনাম 

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ৪ নভেম্বর ২০২৪

শিশু ও বড়দের হাঁপানি

ঋতু পরিবর্তনের মাঝামাঝি সময়ে যেসব শিশুর হাঁপানির সমস্যা

ঋতু পরিবর্তনের মাঝামাঝি সময়ে যেসব শিশুর হাঁপানির সমস্যা থাকে তাদের সমস্যা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। নিশ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট, কাশি, শ্বাস নিতে গেলেই বুকে চাপসহ যন্ত্রণা এবং রাতের বেলা সমস্যা বেড়ে যাওয়া হাঁপানির মূল উপসর্গ। হাঁপানির টান উঠলে স্বভাবতই কষ্ট বাড়ে। তাই শিশুর হাঁপানি থাকলে বিশেষ যতœ নিতেই হবে। শিশুদের হাঁপানির লক্ষণ বড়দের থেকে আলাদা হয়।

শিশুরা তাদের উপসর্গ যথাযথ প্রকাশ করতে পারে না। তবে বারবার সর্দি-কাশি এই অসুখের এক অন্যতম লক্ষণ। কাশতে কাশতে চোখ-মুখ লাল হয়ে যায়। বুকে চাপ ধরাসহ ব্যথা ও কষ্ট হয়। রাতে কাশি ও শ্বাসকষ্ট বাড়ে এবং খাবার গ্রহণেও  সমস্যা হয়। বেশিরভাগ হাঁপানি আক্রান্ত শিশুদের কাশি ও শ্বাসকষ্ট ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়।
কেন হয়?
ফুসফুসে বাতাস বহনকারী সরু সরু অজস্র শ্বাসনালি রয়েছে। অ্যালার্জি ও অন্যান্য কারণে সূক্ষ্ম শ্বাসনালিগুলোর মাংসপেশি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। শ্বাসযন্ত্রে ঠিকমতো অক্সিজেন চলাচল করতে পারে না। ফলে শরীরও প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না। আর এর ফলে নিশ্বাসের কষ্ট ও দুর্বলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। শ্বাসনালিতে মিউকাস বা কফ জমে এই সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। 
করণীয় : শিশুর হাঁপানি থাকলে বাড়িতে ধূমপান করা যাবে না। শিশু যে ঘরে আছে, সেখানে মশার কয়েল একেবারেই জ্বালাবেন না। ধুলাবালিসহ দূষিত পরিবেশ হাঁপানির কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। ঘরের ভিতরের বাতাস যাতে বিশুদ্ধ থাকে, তা দেখতে হবে। দরকারে এয়ার পিউরিফায়ার লাগানো যেতে পারে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ফিল্টার পরিষ্কার আছে কি না, নিয়মিতভাবে তা দেখে নিতে হবে। অপরিষ্কার ফিল্টার থেকে ধুলো, নোংরা বাতাস বেরিয়ে ঘরের পরিবেশ আরও বিষিয়ে দেয়। স্থূলতাও আরও একটা বড় সমস্যা।

যে শিশুদের ওজন বেশি এবং যাদের রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম, তাদের শ্বাসজনিত রোগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভিটামিন ডি-র ৮০ শতাংশ আসে সূর্যের আলো থেকে। বাকি ২০ শতাংশ বিভিন্ন খাবার থেকে পাওয়া যায়। শিশু যাতে রোদ পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সেই সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে। বিভিন্ন রকম মাছ, দানাশস্য যেমন ওট্স, ডালিয়া ইত্যাদি থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে। শুকনো ফলও ভিটামিন ডি-র উৎস।

এ ক্ষেত্রে কাঠবাদাম, খেজুর, আখরোট খুবই উপকারী। পালং শাকে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন ডি ও ক্যালশিয়াম থাকে। তবে শিশুর ডায়েট চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হওয়া উচিত। শিশুদের ঠান্ডা জাতীয় খাবার ও পানীয়সহ এলার্জি  তৈরি করতে পারে সেরূপ খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে হবে।
চিকিৎসা : হাঁপানি সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসাযোগ্য। ইনহেলার হলো হাঁপানির চিকিৎসার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ইনহেলারের মাধ্যমে ওষুধ দেওয়া হয়, যাতে ওষুধ সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছাতে পারে এবং ন্যূনতম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ঘটায়। দুই ধরনের হাঁপানির ওষুধ আছে রোগ নিয়ন্ত্রণকারী এবং উপশমকারী। নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধের ব্যবহার হয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোগলক্ষণ ও আক্রমণ প্রতিরোধ করতে। নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধগুলো তাৎক্ষণিক আরাম দেয় না। উপশমকারী ওষুধ অবিলম্বে আরাম দেয় এবং হাঁপানির আক্রমণ চলাকালে ব্যবহার করা হয়।

নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধের নিয়মিত ব্যবহার উপশমকারী ওষুধের প্রয়োজন কমাতেও সাহায্য করে।  হাতের কাছে সব সময়ে ইনহেলার রাখতে হবে। বিশেষ করে রাতে হাঁপানির টান উঠলে যাতে ইনহেলার কাছেই থাকে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নেবুলাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোনো কোনো রোগীর জন্য এলার্জি রোধক ওষুধ প্রয়োজন হয়। শিশুকে ইপিআইয়ের সকল টিকা যথাসময়ে নেওয়ার পাশাপাশি  নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা  প্রতিরোধক টিকা দিয়ে রাখতে হবে।

হাঁপানির সঙ্গে সঙ্গে নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। টিকা নেওয়া থাকলে সেই ভয় থাকে না। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে সচেতন হতে হবে আমাদের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখাও জরুরি। 


লেখক : অধ্যাপক পরিচালক ও অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসিন। জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী। চেম্বার : পপুলার কনসালটেশন সেন্টার, ধানম-ি, ভবন -২, ধানমণ্ডি  ঢাকা। হটলাইন :১০৬৩৬,
০৯৬৬৬ ৭৮৭-৮০১

×