ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

বার্ধক্য বিলম্বের ওষুধ

এপি নিউজ

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বার্ধক্য বিলম্বের ওষুধ

বার্ধক্য বিলম্বের ওষুধ 

‘টাইপ-২’ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে এমন একটি ওষুধ, যেটি বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ধীর কিংবা বিলম্ব করতে পারে বলে জানান গবেষকরা।
ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক হারলান ক্রুমহোলজ বেশ কয়েকটি নতুন গবেষণা প্রকাশের পর বলেছেন যে, ‘সেমাগ্লুটাইড’ যা ‘ওজেম্পিক’ নামে বেশি পরিচিত; এটি ব্যবহারে সুদূরপ্রসারী সুবিধা রয়েছে।
‘সেমাগ্লুটাইড’ ইনজেকশন ইনক্রিটিন মাইমেটিক্স নামক ওষুধের একটি শ্রেণিতে রয়েছে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে অগ্ন্যাশয়কে সঠিক পরিমাণে ইনসুলিন মুক্ত করতে সাহায্য করে। ইনসুলিন রক্ত থেকে চিনিকে শরীরের অন্যান্য টিস্যুতে সরাতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যেখানে এটি শক্তির জন্য ব্যবহৃত হয়।

অধ্যাপক হারলান ক্রুমহোলজ গবেষণায় দেখেছেন যে ওষুধটি হার্ট ফেইলিওর, আর্থ্রাইটিস, আলঝেইমার এবং এমনকি ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজি কনফারেন্স ২০২৪-এ গবেষণাগুলো উপস্থাপন করা হয়েছিল। কনফারেন্সে অধ্যাপক ক্রুমহোলজ উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘এটা আমাকে একেবারেই অবাক করবে না যে এই ওষুধ মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্য প্রক্রিয়াকেও ধীর করে দেবে।’
নতুন গবেষণাটি আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি (জেএসিসি) জার্নালসহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। যা মূলত অধ্যাপক ক্রুমহোলজ সম্পাদনা করেন। ‘এই যুগান্তকারী ওষুধগুলো কার্ডিওভাসকুলার বিভাগে বিপ্লব ঘটাতে প্রস্তুত এবং নাটকীয়ভাবে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য বিভাগকে উন্নত করতে পারে,’ অধ্যাপক ক্রুমহোলজ যোগ করেন।
গবেষণাগুলো পরীক্ষার জন্য ‘৪৫ কিংবা তার বেশি বয়সী মানুষদের’ নিয়ে করা হয়েছে। এই পরীক্ষামূলক গবেষণায় মোট ১৭ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি লোককে ট্র্যাক করা হয়েছে। কারণ তাদেরকে ২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম সেমাগ্লুটাইড বা একটি প্লাসিবো দীর্ঘ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে দেওয়া হয়। এরপর এই পরীক্ষামূলক গবেষণার রেজাল্ট সবার সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের ছিল এবং তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগ ছিল। তবে, তাদের ‘ডায়াবেটিস’ ছিল না। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, যারা ওষুধটি গ্রহণ করেছিলেন তারা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা এবং ‘কোভিড-১৯’-সহ সমস্ত রোগের কারণে মারা যাননি। তারা ওষুধটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া স্বাভাবিক কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহার করা লোকেদের কোভিড ধরা পড়ার সম্ভাবনা ছিল ঠিক, তবে তাদের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল কম। ‘সেমাগ্লুটাইডে’ মারা যাওয়ার হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে, প্ল্যাসিবো গ্রহণে মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ১ শতাংশ।
অন্যদিকে, নারীরাও খুব কম কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। তবে, ওষুধটি নারী কিংবা পুরুষ; সবার ক্ষেত্রে কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা কিংবা ঝুঁকি কমিয়েছে। এটি হার্টের ফেইলিউরের লক্ষণগুলোকেও কম করে। সেইসঙ্গে শরীরে প্রদাহের মাত্রা হ্রাস করে, বিশেষ করে ব্যবহারকারীদের ওজন হ্রাস করুক বা না করুক; উভয় পরিস্থিতিতেই।
গবেষণার প্রধান লেখক এবং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিনের অধ্যাপক ড. বেঞ্জামিন সিরিকা বলেন, গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ‘অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতাসহ অনেক রোগের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।’
ওষুধটি একটি ইনজেকশন আকারে আসে এবং ‘জিএলপি-১’ হরমোনের অনুকরণ করে। এটি সেবনের ফলে ব্যবহারকারী তৃপ্ত এবং কম ক্ষুধার্ত বোধ করে। তবে বিশেষজ্ঞরা অতীতে সতর্ক করেছেন যে ওষুধটি ‘দ্রুত সমাধান’ কিংবা ভালো খাওয়া এবং ব্যায়ামের বিকল্প নয়। এবং এটি শুধুমাত্র চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে দেওয়া উচিত।
যে কোনো ওষুধের মতো এটিতেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ঝুঁকিও থাকতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে বমি বমি ভাব, পেট খারাপ, গ্যাসজনিত সমস্যা। - এপি নিউজ

×