ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

শিশুর কেন চশমা লাগে

ডা. আবুল কালাম আজাদ

প্রকাশিত: ০০:৫০, ১৪ মে ২০২৪

শিশুর কেন চশমা লাগে

শিশুর কেন চশমা লাগে

আমি প্রায় ২৫ বছর যাবত চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রাকটিস করছি। আমি এই দীর্ঘ প্রাকটিস জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি  ইদানীং প্রায় সকল বাচ্চারই  দূরে দেখার জন্য চশমা লাগছে। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় এটাকে বলা হয় মাইওপিয়া বা ক্ষীণ দৃষ্টি। কাছে বা নিকটে সব ভালো দেখা যায় কিন্তু দূরে দেখা যায় না। 
কারণ 
বিভিন্ন কারণে এটা হতে পারে।
যেমন-
১। পরিবেশগত কারণ
২। জন্মগত বা জেনেটিক। 
৩। কোনো কারণ জানা যায় না (ইডিওপ্যাথিক)।
১। পরিবেশগত কারণ।
আমাদের আধুনিক জীবন যাপনে এসেছে আমুল পরিবর্তন। আমরা বড়রা সব সময় বাইরে থাকি জীবিকার প্রোয়োজনে।আর বাচ্চাঁরা থাকে ঘরে বা স্কুলে বা কোচিং-এ। 
 তারা ঘরে একা একা থাকে। তাদের হাতে দেওয়া হয় স্মার্ট  মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি যেটা তাদের চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাদেরকে সবসময়ই চারদেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হয়। এই কারণে তাদের দৃষ্টিশক্তিও এই চার দেওয়ালের মধ্যেই আবদ্ধ থাকে।
কিন্তু তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ  তথা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি সাধনের জন্য ও তাদেরকে  অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট টাইম বাইরে খোলা আকাশের নিচে খেলার মাঠ, জিম বা অন্য কোথাও থাকতে হবে। যেখানে দূরে দিগন্ত দেখা যায়, সেখানে থাকতে হবে। সেখানে তারা দূরে দিগন্তে সবুজ বনানী দেখবে, তখন তাদের দূরের দৃষ্টি তৈরি হবে।
গ্রামের বাঁচ্চাদের কিন্তু এই সমস্যা থাকে না। তারা প্রকৃতিগত ভাবেই এরকম  পরিবেশে বড় হয়ে ওঠে।
এজন্য তাদের তেমন একটা চশমা ও লাগে না। শহরের বাচ্চারা এখন সবুজ শাকসবজি খেতে চায় না। তারা ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত যা বাচ্চাদের সুষম খাদ্য উপাদান সরবরাহ করতে ব্যর্থ। গুঁড়া মাছ, দুধ, মাছ মাংস তারা খেতে চায় না। আর এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য বা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন।
মাওপিয়া রোগের লক্ষণ 
বাচ্চারা দূরে দেখতে পারে না। কাচে বা ঘরের ভিতর বা চার দেওয়ালের মধ্যে তারা ভাওলাই দেখতে পাই। চোখ টেরা বা স্কুয়িন্ট হতে পারে। 
প্রতিকার  ও চিকিৎসা 
সব রোগের জন্যই চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার বা প্রিভেনশান উত্তম।
যে সব কারণে এটা হচ্ছে তা থেকে মুক্ত হতে পারলেই কেবল বাচ্চাদের  চশমা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। 
যেমন বাচ্চারা যতক্ষণ স্কুলে থাকবে তার তিন ভাগের একভাগ সময় ক্লাস রুমের বাইরে যেমন খেলার মাঠে সময় কাটাবে।
বাচ্চাদের সাঁতার শেখাতে হবে।
তাদের খেলার মাঠে নিয়ে যেতে হবে।
তাদেরকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। মোট কথা তাদেরকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে।
চিকিৎসা
নিয়মিত বাচ্চাদের চক্ষু পরীক্ষা করাতে হবে। স্কুলে দেওয়ার আগে অবশ্যই বাচ্চাকে চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে।
চশমা না পরলে কি ক্ষতি? 
চিকিৎসা বা চশমা যদি না ব্যবহার করা হয় তবে সে দূরের জিনিস দেখবে না। তার আই কিউ কম হবে। সে সব ব্যাপারে পিছিয়ে পড়বে।
চশমা ছাড়াও মাইওপিয়া রুগীদের অপারেশন করা যেতে পারে। যেটাকে বলা হয় ক্লিয়ার লেন্স এক্সট্রাকশন প্লাস পিসিআওএল। এটা অবশ্য বড়দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ল্যাসিক আর একটা অপশান।
যারা চশমা নিতে চায় না এবং বয়স ২১ বা এর বেশি এবং পাওয়ার বা মাইওপিয়া আর বাড়ে না তাদের ল্যাসিক করা যায়। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে করা দরকার। 

 লেখক : ডা. মো: আবুল কালাম আজাদ 
সহকারী  অধ্যাপক (ফ্যাকো ও গ্লুকোমা সার্জন) 
নির্বাহী পরিচালক ও পরামর্শক 
বাংলাদেশ আই হাসপাতাল, চিড়িয়াখানা রোড, মিরপুর-২ ঢাকা। ফোন : ০১৮৪৮৪২২০১০, ০১৮১৮৪৯৩০০০

×