ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

শিশুর ঠান্ডা জ্বরে করণীয়

ডা. ইমনুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০১:১৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শিশুর ঠান্ডা জ্বরে করণীয়

শিশুদের ঠান্ডা  জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে

শিশুদের ঠান্ডা  জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। তাতে অভিভাবক ও চিকিৎসকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ঠান্ডা জ্বর, টাইফয়েড জ্বর, প্রস্র্রাবে সংক্রমণজনিত জ্বর, রক্ত আমাশয়ও দেখা দিয়েছে।
টাইফয়েড জ্বর পানিবাহিত রোগ সালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয়। সংক্রমিত হওয়ার 
১০-১৪ দিন পর জ্বরসহ এ রোগের অন্য লক্ষণগুলো দেখা দেবে। পানিবাহিত সালমোনেলা জীবাণু দূষিত পানি ছাড়াও দুধ অথবা দুগ্ধজাত সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হতে পারে। আর টাইফয়েড জ্বর যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের তীব্রভাবে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। প্রধানত জ্বর, যা ক্রমান্বয়ে সিঁড়ির ধাপের মতো বাড়তে থাকে, পাশাপাশি বমি, পাতলা পায়খানাসহ মাথাব্যথা হয়।

এছাড়াও পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়াসহ জিহ্বার ওপর সাদা প্রলেপ পড়তে দেখা যায়। সাতদিন জ্বর থাকার পর বুক-পেট এবং পিঠে লালচে দানার মতন রাশ দেখতে পাওয়া যায়। এ দানাগুলোর বৈশিষ্ট্য  হলো, হাতের আঙুলের চাপে দানাগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রথম সাতদিন জ্বর অতিক্রম করে যাওয়ার পরও যথাযথ চিকিৎসা শুরু না করলে শিশুদের নানা রকম মারান্তক জটিলতা দেখা যায়। যেমন-  নিউমোনিয়া হয়ে খিঁচুনি, অসাড় বোধ করা , পেট ফুলে যাওয়া , রক্ত পায়খানা, জন্ডিস এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।

কখনও কখনও চতুর্থ সপ্তাহে এসে জ্বর নিজ থেকে ভালো হয়ে যেতে দেখা যায়। অনেক সময় হঠাৎ করে জ্বর কমে গিয়ে শিশু সুস্থ বোধ করতে দেখা গেলেও খুশি হওয়ার কারণ থাকে না। কারণ, এ সময় শিশু ক্রমাগত আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা যায়। অন্যান্য জটিলতার মধ্যে নিউমোনিয়া, হাড়ের প্রদাহ, অস্থি-সন্ধির প্রদাহ, স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ, হৃৎপি-ের মাংসপেশিতে প্রদাহ ও কিডনির প্রদাহ দেখা দিতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা : জ্বরের প্রথম সপ্তাহে টাইফয়েড জ্বর নির্ণয় করা বেশ কঠিন, তবে পরে রক্ত ও প্রসাব-পায়খানার কালচার পরীক্ষা এবং ভিডাল টেস্ট করে রোগ নিরূপণ করা সম্ভব।

হাসপাতালে ভর্তি যোগ্য শিশু 

মাত্রাতিরিক্ত জ্বর, বারবার বমি হওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, পায়খানায় রক্ত যাওয়া, খিঁচুনি হওয়া, অজ্ঞান হওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

চিকিৎসা

পুষ্টিকর খাওয়া-দাওয়া ও বিশ্রাম, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ/ট্যাবলেট খেতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে এন্টিবায়োটিক খেতে হবে না। আর দরকার জরুরি হলে
যথাযথ নিয়মে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো হোক। এসময় অভিভাবকরা অধৈর্য না হয়ে সঠিক পরিচর্যা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই সর্বোত্তম।

প্রতিরোধ কৌশল 

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা, নিরাপদ পানি/খাবার গ্রহণ *, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা, টিকা প্রদান করা, এক  বছর থেকে ছোট-বড় সবাই এ টিকা নিতে পারে। সবার জন্য এ টিকার একটি ডোজ মাংসপেশিতে ৩ বছর পরপর দিতে হয়। আর টাইফয়েড কোনো ছোঁয়াচে জ্বর নয়। সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা নিলে ১০০ ভাগ ক্ষেত্রে এ রোগ ভালো হয়ে যায়।

লেখক : অধ্যাপক, শিশু বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড মিরপুর-১০, ঢাকা।
হট লাইন: ১০৬৭২

×