
পারকিনসন্স ডিজিজ (পিডি) হলো মস্তিষ্কের একটি অবক্ষয়জনিত অবস্থা
পারকিনসন্স ডিজিজ (পিডি) হলো মস্তিষ্কের একটি অবক্ষয়জনিত অবস্থা, যা কিছু মোটর লক্ষণ (ধীর গতি, কাঁপুনি, অনমনীয়তা) এবং বিভিন্ন ধরনের অমোটর জটিলতা (পরিজ্ঞানীয় দুর্বলতা, মানসিক রোগ, ঘুমের সমস্যা এবং ব্যথা ইত্যাদি) এগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। গবেষণায় দেখা যায়, এ রোগের কোনো না কোনো ধাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ লোক বিষণœতার সম্মুখীন হন এবং ৪০ শতাংশ উদ্বেগজনিত ব্যাধি অনুভব করেন, যা তাদের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, জীবনের মান হ্রাস করে। এর কারণসমূহ হলো-
১) জৈবিক কারণ
পারকিনসন্স রোগ এবং বিষণœতা, চিন্তাভাবনা এবং আবেগের সঙ্গে জড়িত মস্তিষ্কের একই অংশকে প্রভাবিত করে। উভয় অবস্থাই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার/মস্তিষ্কের রাসায়নিকের (ডোপামিন, সেরোটোনিন এবং নরএপিনেফ্রিন) ভারসাম্যহীনতা থাকে, যা মেজাজ এবং চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
২) মনস্তাত্ত্বিক কারণ
নেতিবাচক চিন্তার একটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা মানুষের মাঝে দুঃখ, অসহায়ত্ব এবং হতাশার অনুভূতি তৈরি করতে পারে; যা একজন ব্যক্তিকে বিষণœতার জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। সীমাবদ্ধ জীবনধারার ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা সহায়ক সামাজিক যোগাযোগের অভাব, দ্রুত অবসরগ্রহণ বা পরনির্ভরশীলতা এগুলো বিষণœতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৩) পরিবেশগত কারণ
গুরুতর মানসিক চাপ, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার কারণে জীবনযাপনে কষ্ট, কিছু লোকের জন্য বিষণœতা সৃষ্টি করতে পারে।
৪) ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
এ রোগের চিকিৎসায় প্রেসক্রিপশনের ওষুধগুলো বিষণœতার মতো উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষণœতা নির্ণয়ের চ্যালেঞ্জ
(ক) কিছু বিষণœতার লক্ষণ চউয়ের সঙ্গে ওভারল্যাপ করে। উদাহরণস্বরূপ, ঘুমের সমস্যা এবং ধীর অনুভূতি উভয় অবস্থাতেই ঘটে। তাই, পারকিনসন্সে বিষণœতা শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে।
(খ) পারকিনসন্সের বিষণœতা নির্ণয়কে জটিল করে তুলতে পারে এমন অন্যান্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে:
(গ) মুখের মাস্কিং ইফেক্ট, মুখের পেশিতে পারকিনসন্সের একটি উপসর্গ, যাতে পারকিনসন্স আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে দৃশ্যমানভাবে আবেগ প্রকাশ করা কঠিন করে তুলতে পারে।
(ঘ) পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই চিনতে পারেন না যে, তাদের মেজাজের সমস্যা রয়েছে বা লক্ষণগুলো ব্যাখ্যা করতে অক্ষম, তাই তারা চিকিৎসা চান না।
এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিষণœতা চলাচল এবং জ্ঞানীয় পারকিনসন্সের উপসর্গ উভয়কেই তীব্র করতে পারে। চিকিৎসা যেমন কম্পন এবং অন্যান্য পারকিনসন্সের লক্ষণগুলোকে কমাতে পারে, তেমনি তারা বিষণœতাও উপশম করতে পারে। বিষণœতা, যদিও এ রোগে সাধারণ লক্ষ্মণ, এটিকে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয় না। অক্ষমতা হ্রাস এবং জীবনের মান উন্নত করার জন্য এটির চিকিৎসা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
(ঙ) মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং, বিশেষত জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি (সিবিটি), বিষণœতা এবং উদ্বেগ কমাতে চিন্তাভাবনা ও আচরণের ধরন চিনতে এবং পরিবর্তন করতে সহায়তা করে।
(চ) রুটিনমাফিক ব্যায়াম, হাঁটা, ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে চলা, যোগব্যায়াম, বাগান করা বা অন্য কোনো কার্যকলাপ যা রোগী উপভোগ করেন, তা হতাশার লক্ষণগুলোকে কমিয়ে দিতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল, চেম্বার :
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার শ্যামলী, ঢাকা।
মোবাইল :
০১৭৯৮-৫৬-০০-৪৪