ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

চোয়াল ব্যথা

ডা. হারাধন দেবনাথ 

প্রকাশিত: ০১:০০, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩

চোয়াল ব্যথা

চোয়াল ব্যথা

ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া কী :
ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া (টি এন/ঞঘ) বলতে মুখে হঠাৎ এবং প্রচণ্ড  যন্ত্রণার অনুভূতিকে বোঝায়, যেটা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এই অবস্থাটি মুখের একদিকে বা উভয় দিকে হতে পারে।
কারণ : ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার কারণ হলো- ৫ম ক্রেনিয়াল নার্ভের ক্ষতি বা অতিরিক্ত চাপ। মস্তিষ্কের নিচের অংশে শিরা বা ধমনির সঙ্গে লেগে যদি ট্রাইজেমিনাল নার্ভের ওপর অস্বাভাবিক চাপ পরে, তবেই এই ব্যথা হয়। এ ছাড়া বার্ধক্য, মাল্টিপল স্কেলেরোসিস, মস্তিষ্কে টিউমার বা নার্ভের পাশে থাকা টিউমারের চাপ প্রয়োগ ও অন্য কোনো সমস্যার কারণেও এই ব্যথা হতে পারে। লক্ষণ বৈদ্যুতিক শকের মতো তীব্র ব্যথা। দিনে, সপ্তাহে ও মাসজুড়ে এ ব্যথা হতে পারে। ব্যথা কোনো কারণ ছাড়াই উঠতে পারে।
সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই রোগ বেশি হয়।
লক্ষণ : ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে যে সকল লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো-
১. মুখ বা চোয়ালের এক পাশে হঠাৎ করে বৈদ্যুতিক শকের মতো তীব্র ব্যথা।
২. শেভ করার সময় বা মুখে হাত বুলালে কিংবা দাঁত ব্রাশ করার সময় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
৩. ব্যথা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়, সাধারণত দুই মিনিটের কম।
৪. বারবার ব্যথা হয়, ব্যথা কয়েকদিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।
৫. দুটি এপিসোডের মাঝখানে সাধারণত ব্যথা থাকে না।
৬. ট্রাইজেমিনাল নার্ভ যেসব জায়গায় অনুভূতি সরবারহ করে, যেমন- গাল, চিবুক, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট এবং মাঝেমধ্যে চোখ ও কপালে ব্যথা হয়।
৭. ব্যথা মুখের যেকোনো একদিকে হয় (যেদিকের নার্ভ আক্রান্ত হয় সেদিকে)।
৮. দিনে দিনে ব্যথার তীব্রতা ও ব্যাপকতা বাড়তে থাকে।
রোগ নির্ণয় : রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসক সাধারণত তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজেন। এক- কি ধরনের ব্যথা হয়, দুই- ব্যথার উৎপত্তিস্থল এবং তিন- কী করলে ব্যথা বেড়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে কিছু নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা করলে রোগ নির্ণয় করে ফেলা সহজ হয়ে যায়। রোগের কারণ নির্ধারণের জন্য কখনো কখনো এমআরআই, ইএমজি, এনসিএস ইত্যাদি করার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা : একজন নিউরোলজিস্ট অথবা নিউরোসার্জনের তত্ত্বাবধানে থেকে এই রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে :
(ক) ওষুধ : ব্যথানাশক ওষুধ এসিটামিনোফেন, এনএসএআইডস,
অ্যান্টিকনভালসেন্ট কারবামাজেপিন, অক্সকারবাজেপিন, গাবাপেনটিন, মাসল রিলাক্সেন্ট ব্যাকলোফেন।
(খ) রিহ্যাবিলিটেশন : ফিজিক্যাল থেরাপি- ইলেকট্রিক্যাল ইস্টিম্যুলেশন, আইস ম্যাসেজ, হট প্যাকস, বায়োফিডব্যাক; স্পিচ থেরাপি- কথা বলতে বা খাবার গিলতে যাদের সমস্যা হয়; কগনেটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপি; অ্যাডাপটিভ ইক্যুইপমেন্ট- টেলিফোন এয়ারসেট; ব্যায়াম- লো ইনটেনসিটি অ্যারোবিক এক্সারসাইজ; রিলাক্সেশন টেকনিকস- মেডিটেশন ইত্যাদি।
(গ) ইন্টারভেনশন : ট্রাইজেমিনাল নার্ভ ব্লক, লোকাল অ্যানেসথেটিক নার্ভ ব্লক, নিউরোলাইটিক ব্লক উইথ অ্যালকোহল/গ্লাইসেরল, আকুপাংচার।
(ঘ) সার্জারি : সাধারণত অন্যান্য চিকিৎসা কাজ না করলে শুধু তখনই নিউরো সার্জারির প্রয়োজন হয়।
এক্ষেত্রে একজন নিউরো সার্জন মাইক্রোভাস্কুলার ডিকমপ্রেশন, গামা নাইফ রেডিওসার্জারি পদ্ধতিতে এই অপারেশন করা হয়ে থাকে।

লেখক: অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, ল্যাবএইড হসপিটাল, ধানমন্ডি, ঢাকা। ০১৭১১৩৫৪১২০

×