ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

কাটা অঙ্গ গজাবে নতুন করে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সফলতা

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ৫ জুলাই ২০২৫

কাটা অঙ্গ গজাবে নতুন করে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সফলতা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের নেতৃত্বে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে কেবল রাজনীতি ও বাণিজ্য নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে চীন। এবার দেশটির বিজ্ঞানীরা এমন এক বৈপ্লবিক আবিষ্কারের পথে পা রেখেছেন, যা ভবিষ্যতে কাটা অঙ্গ পুনরায় গজিয়ে ওঠা সম্ভব করে তুলতে পারে।

 

 

 

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান সাময়িকী “সাইন্স”-এ। সেখানে দেখানো হয়, ইঁদুরের কানের কাটা অংশে ভেতরের কার্টিলেজসহ পুনরায় অঙ্গ গজিয়ে উঠেছে—যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক বিরল ঘটনা।

গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ড. ওয়াং ওয়েই, বেইজিংয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের গবেষক। তিনি জানান, “এই অঙ্গ পুনর্জন্মের পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ জেনেটিক সুইচ, যা এতদিন বিজ্ঞানের অজানা ছিল। এই সুইচ অন করে অঙ্গ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।”

 

 

গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ‘রেটিনোইক এসিড’, যা ভিটামিন এ থেকে তৈরি হয়। এটি শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয়, কোথায় ও কিভাবে পুনর্গঠন শুরু করতে হবে। এই রাসায়নিক উপাদান কার্যকর করতে সহায়তা করে একটি নির্দিষ্ট জিন, যেটি বিজ্ঞানীরা তিন বছর ধরে নিবিড়ভাবে খুঁজে বের করেছেন।

 

 

এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ‘এস্টোরিওসিক’, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন “জীবনের ক্যামেরা”।
এটি কোষের ভেতরকার কার্যক্রম যেমন ক্যাপচার করে, তেমনি কোন জিন কখন কীভাবে কাজ করছে তাও পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।

সহগবেষক ডেং জিচিং, বিজিআই রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেন, “এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অঙ্গ পুনর্জন্মের পূর্ণ জিনগত মানচিত্র আমাদের সামনে খুলে গেছে।”

 

 

গবেষকরা অবশ্য জানিয়েছেন, মানবদেহ ইঁদুরের শরীরের তুলনায় বহু গুণ বেশি জটিল। প্রতিটি অঙ্গ ভিন্ন সংকেত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কাজ করে। ফলে এই গবেষণার মানবদেহে সরাসরি প্রয়োগ এখনও সম্ভব নয়, তবে সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।

ড. ওয়াং ওয়ে বলেন, “এই গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে জিনগত এক বা একাধিক সুইচ অঙ্গ পুনর্জন্ম শুরু করতে পারে। এখন আমাদের লক্ষ্য মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের সেই সুইচগুলো চিহ্নিত করা।”


যদিও এই গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে, তবে বিজ্ঞানীদের আশা একদিন পঙ্গু মানুষ আবার হাঁটতে পারবে, কাটা অঙ্গ নতুন করে গজাবে।
চীন যে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে, এই গবেষণা তারই শুরু।

একসময় যা ছিল কেবল বিজ্ঞানের গল্প, আজ তা বাস্তবের মুখোমুখি।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিগন্তে চীনের এই আলো হয়তো একদিন আধুনিক চিকিৎসার ভবিষ্যৎ চেহারা বদলে দেবে।

ছামিয়া

×