ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

‘নীরব ঘাতক’ খাদ্যনালীর ক্যান্সার

ডা. সেতাবুর রহমান

প্রকাশিত: ০১:১৮, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘নীরব ঘাতক’ খাদ্যনালীর ক্যান্সার

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ক্যান্সার দিবস

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ক্যান্সার দিবস। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সারাদেশেই দিবসটির নানা কর্মসূচির আয়োজন করে থাকা হয়। মানুষের শরীরে নানা ক্যান্সারের মধ্যে খাদ্যনালীর ক্যান্সার একটি নীরব ঘাতক।
খাদ্যনালীর ক্যান্সার কি?
খাদ্যনালী হলো মানুষের মুখ গহ্বর থেকে পাকস্থলীর সঙ্গে সংযোগকৃত ফাঁকা নল। খাদ্যকে পাকস্থলীতে পৌঁছে দেওয়াই এর কাজ। খাদ্যনালীর অভ্যন্তরে টিউমার বা প্রদাহ থেকে এই ক্যান্সার হতে পারে।
খাদ্যনালীর ক্যান্সার কে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. স্কোয়ামাস সেল
২. এসোফ্যাগাস ও কারসিনোকার্সিনোমা
৩. স্মল সেল আনডিফারেনশিয়েটেড ও কার্সিনোমা
৪. কারসিনাকোর্সিনোমো
তবে সবচেয়ে বেশি যে ধরনটি দেখা যায় তা হলে- স্কোয়ামাস সেল। ৯০% এর বেশি আক্রান্ত হয়। এটির স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয় যে কারণে প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করা গেলে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
খাদ্যনালীতে ক্যান্সারের কারণ-
খাদ্যনালীতে ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনো অজানা। এই রোগটি ডি এন এ তে পরিবর্তনের জন্য হয়ে থাকে যার ফলে অতিমাত্রায় কোষ বৃদ্ধি করে টিউমারের জন্ম দেয়।
সাধারণত নিম্নলিখিত কারণগুলো খাদ্যনালীতে ক্যান্সারের কারণ হিসেবে বিবেচিত-
ক.জি ই আর ডি- এটি একটি হজমজনিত ব্যাধি যা তৈরিকৃত অ্যাসিড যকৃতকে ভাঙতে সাহায্য করে এবং খাদ্য প্রক্রিয়ায় সহায়তার সঙ্গে খাদ্যনালীতে ধাক্কা দিতে শুরু করে। দীর্ঘস্থায়ী জি ই আর ডি খাদ্যনালীতে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
খ. খাদ্যের নিয়মিত রুটিনে তামাক, অ্যালকোহল, পুষ্টিকর খাবারের তুলনায় ফাস্টফুড বেশি গ্রহণ করা।
গ. পেটের যে কোনো ধরনের হজমজনিত সমস্যা।
ঘ. কোন প্লাস্টিক, ক্যামিকেল, রাসায়নিকের সংস্পর্শে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে এ ক্যান্সার হতে পারে।
ঙ. ঘন ঘন বা অবিচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘদিন গরম পানীয় পান করা।
লক্ষণ-
ক. শক্ত খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া এবং পরবর্তিতে তরল খাবার খেতে এমনকি ঢোক গিলতে কষ্ট হয়।
খ. হজমে সমস্যা, বুক জ্বালা পোড়া, বারবার ঢেকুর তোলা, পেট ব্যথা ইত্যাদি বার বার হওয়া।
গ. অরুচি, ওজন কমে যাওয়া।
ঘ.কাশি, রাতে শ্বাসকষ্ট, গলা ও বুকে ব্যথা।
ঙ. দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হলে। 
তবে এ লক্ষণগুলো সাধারণ হওয়াতে অনেকেই বুঝতে পারে না যে এটা ক্যান্সারের পর্যায়ে যেতে পারে।
প্রতিরোধ -
ক. ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য বর্জন করুন
খ. ফাস্টফুড, জাংকফুড, চর্বি ও অ্যালকোহল জাতীয় খাবার বর্জন করুন।
গ. প্রচুর শাক- সব্জি ও ফল খান।
ঘ. পরিমিত পুষ্টিকর খাবার ও হাঁটাচলার মাধ্যমে ওজন ঠিক রাখুন।
প্রতিকার বা চিকিৎসা- চিকিৎসা পদ্ধতিটি কোষের ধরনের উপর নির্ভর করে। তবে সব থেকে সাধারণ চিকিৎসাগুলো হলো- 
ক. সার্জারি
খ. কেমোথেরাপি
গ. ইমিউনোথেরাপি 
ঘ. রেডিওথেরাপি। 
সতর্কতা- যদি সঠিক সময়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে তবে চিকিৎসার মাধ্যমে বেঁচে থাকার হার ৪৭%-৫০% এর কাছাকাছি হতে পারে। আর যদি ক্যান্সার প্রগতিশীল থাকে হবে বেঁচে থাকার হার ২৫% এ নেমে আসে। ২০২০ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী এক বছরে ২১ হাজার ৭৪৫ জনের খাদ্যনালীর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে। এই ক্যান্সারে নারীদের তুলনায় পুরুষ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে পারলে এই ঘাতক ব্যাধি বা খাদ্যনালী ক্যান্সার থেকে ভালো ও বেঁচে থাকা যায়!

লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট, সার্জিক্যাল অনকোলজি
ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা।
প্রয়োজনে : ০১৭৪২-৩০৪২৪৬, ০৯৬৬৬-৭১০০০১

×