ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সায়াটিকা

ডা. হারাধন দেবনাথ

প্রকাশিত: ০১:১৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সায়াটিকা

সায়াটিকা কী, বিষয়টি নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে ভোগেন

সায়াটিকা কী :
সায়াটিকা কী, বিষয়টি নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে ভোগেন। বেশির ভাগ মানুষ এটিকে বাতের ব্যথা মনে করলেও এটি আসলে একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা।
আমাদের দেহের সবখানেই রয়েছে নার্ভ বা স্নায়ু। আমাদের পিঠের মাঝখানে যে লম্বা হাড়ের মতো রয়েছে, যাকে আমরা সাধারণত বলি কশেরুকা বা স্পাইন, এর মধ্যে লম্বা দড়ির মতো একটি অঙ্গ থাকে। একে স্পাইনাল কর্ড বলা হয়। এর দুইপাশ থেকে একটি করে নার্ভ বের হয়। এ নার্ভগুলো আমাদের দেহে বিস্তার লাভ করে। নার্ভগুলো বের হয় খুব সরু ছিদ্র দিয়ে। কোন কারণে এ ছিদ্রগুলো আরও সংকুচিত হলে চাপ পড়ে নার্ভে। তখন উপসর্গ দেখা দেয়।
সায়াটিকার কারণ :
একক স্নায়ু হিসেবে সায়াটিক শরীরের সবচেয়ে বড় স্নায়ু। এটি স্নায়ুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড থেকে মেরুদ-ের একেবারে শেষ প্রান্তে (লাম্বার ৩, ৪, ৫ ও স্যাকরাল ১ ভার্টিব্রা) উরুর পেছন দিক দিয়ে হাঁটুর নিচের মাংসপেশীর মধ্য দিয়ে পায়ের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত। যখন কোনো কারণে এই নার্ভ বা স্নায়ু যেখান থেকে বের হয়েছে সেখানে বা যেখানে বিস্তৃত হয়েছে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা চাপ লাগে বা ইরিটেটেড হয়, তখন সায়াটিকা হয়।
সায়াটিকার লক্ষণ :
যদিও কোমরের উভয় অংশ এবং দুই পায়েই সায়াটিকা হতে পারে, তবে এক পাশে ও এক পায়েই রোগটি বেশি হতে দেখা যায়। 
নিচে সায়াটিকার কিছু
লক্ষণ দেওয়া হলো :
* কোমরে ব্যথা- সাধারণত নিচের দিকে এবং এক পাশে।
* ব্যথা কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে যায়। ঊরুর দিকে বেশি অনুভূত হয়।
* অনেক ক্ষেত্রে কোমরে কোনো ব্যথা থাকে না; কিন্তু ঊরুর পেছন দিক থেকে শুরু করে হাঁটুর নিচের মাংসপেশীর মধ্যে বেশি ব্যথা করে।
* ব্যথা সাধারণত তীব্র ধরনের হয়। সুই ফুটানোর মতো ব্যথা হয়।
* শুয়ে থাকলে ব্যথা কম থাকে, কিছুক্ষণ হাঁটলেও ব্যথা কমে যায়। কিন্তু বসে থাকলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা বাড়ে।
ক্স অনেক সময় কিছুক্ষণ হাঁটলে আর হাঁটা যায় না। তখন কিছুটা বিশ্রাম নিলে আবার কিছু সময় হাঁটা যায়।
ক্স আক্রান্ত পায়ে ঝিন ঝিন বা অবশ ভাব হয় ও দুর্বলতা অনুভূত হয়।
চিকিৎসা : প্রথম অবস্থায় রোগী দুই সপ্তাহ পূর্ণ বিশ্রাম (শক্ত বিছানায় শুয়ে) এবং সেই সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করলে ব্যথা সেরে যায়। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশন করে বের হয়ে আসা ডিস্ক অপসারণ করতে হয় বা সরু হয়ে যাওয়া স্পাইনাল ক্যানাল ঠিক করা হয়। অপারেশন ছাড়া চিকিৎসার মধ্যে আছে ঠা-া বা গরম সেঁক নেওয়া। সাধারণত প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট ঠা-া বা গরম, কিছু ক্ষেত্রে একবার ঠা-া, একবার গরম এভাবে প্রয়োগ করতে হয়। যেসব কারণে অপারেশন করতে হয়, সেগুলো হচ্ছে-
* তিন মাস ওষুধ সেবন ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেওয়ার পরও ব্যথা না কমলে।
* ব্যথা এত বেশি তীব্র হয় যে রোগী শুয়ে থাকলেও ব্যথা হচ্ছে- এমন হলে।
* যদি রোগীর অজান্তেই মল-মূত্র বের হয়ে আসে।
* যদি পা (বিশেষ করে পাতা) অবশ হয়ে যায় অথবা পায়ের বোধশক্তি কমে যায় বা বোধশক্তি একেবারে চলে যায়।
সতর্কতা : একবার সায়াটিকা সেরে গেলেও আবার হতে পারে। তাই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-
* শক্ত বিছানায় শোয়া।
* ঝুঁকে কোনো কাজ না করা।
* একনাগাড়ে অনেক্ষণ বসে কাজ না করা।
* বেশি সময় ধরে বসে থাকতে হয় এমন ভ্রমণ এড়িয়ে চলা।
* ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যায়াম করা।
* একসঙ্গে বেশি না হাঁটা। অনেক উঁচুতে সিঁড়ি বেয়ে না ওঠা।
* পরামর্শ মতো গরম সেঁক দেওয়া।

লেখক : অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
 চেম্বার : ল্যাবএইড হসপিটাল, (দ্বিতীয় তলা) ধানম-ি, ঢাকা।
০১৭১১-৩৫-৪১-২০,
হটলাইন : ১০৬০৬

×