ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি

ডা. এম নিজামুল হক

প্রকাশিত: ০২:১৩, ৬ ডিসেম্বর ২০২২

ক্যান্সারের চিকিৎসায় রেডিওথেরাপি

ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার বেশ কিছু ধাপ রয়েছে

ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার বেশ কিছু ধাপ রয়েছে, তার মধ্যে ক্যান্সারের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত আরেকটি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো রেডিওথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি। ক্যান্সারের ধরনের উপরে ভিত্তি করেই চিকিৎসকরা রেডিওথেরাপির পরামর্শ দেন। রেডিয়েশন থেরাপির সাহায্যে ক্যান্সারের কোষকে মেরে ফেলা হয়। দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রে কোনো না কোনো সময়ে রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।

রেডিয়েশন থেরাপি হলো উচ্চ-শক্তির বিকিরণ ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং তাদের বিভাজন ও বৃদ্ধির ক্ষমতা নষ্ট করে। অনেক চিকৎসকের মতেই রেডিয়েশন থেরাপি হলো ক্যান্সারের আদর্শ চিকিৎসা পদ্ধতি। যা প্রায়শই কেমোথেরাপি মতো অন্যান্য থেরাপির সঙ্গে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লিনিয়ার এক্সিলারেটর নামক মেশিন ব্যবহার করে এই থেরাপি দেওয়া হয়।

উচ্চ শক্তি নির্গমনের কারণে এক্সরে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে পারে এবং টিউমারকে সঙ্কুচিত করে। চিকিৎসার এই পদ্ধতিকে রেডিয়েশন থেরাপি বলা হয়। ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে রেডিওথেরাপির সাহায্য নেওয়া হয়। তবে অনেক রোগীদের মধ্যে রেডিয়েশন থেরাপি নিয়ে অনেক ভুল ধারণা ও ভীতি কাজ করে।
কোন্ পর্যায়ে রেডিওথেরাপি
এই থেরাপিতে রোগীর দেহে কোনো ব্যথা হয় না। বলা যায়, অনেকটা এক্স-রের মতো। এবং রোগীর অবস্থার উপরে নির্ভর এবং এর সময়কাল নির্ধারণ করা হয়। এই থেরাপির মূল লক্ষ্য থাকে রোগীর দেহের ক্যান্সারযুক্ত কোষগুলোকে বিনাশ করা। অনেক ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপির ফলে স্বাস্থ্যকর কোষের ক্ষতি হয় ঠিকই, তবে সেটি স্থায়ী হয় না। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পয়েন্টগুলোকে লক্ষ্য করেই এই থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। পাশাপাশি, ক্যান্সার নয়, এমন কোষগুলো রেডিয়েশন থেরাপি থেকে নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও তা অত্যন্ত কম এবং যেখান থেকে সংশ্লিষ্ট রোগী সহজেই নিজেকে সুস্থ করে তুলতে পারেন। ওজন কমে যাওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ক্ষুধা কমে যাওয়ার মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন এবং পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি ডায়েটচার্ট তৈরি করে তা মনে চলতে বলা হয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি
ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা যায়। যেমন, শেষ পর্যায়ের ক্যান্সারের লক্ষণ কমাতে, ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা হিসেবে, অস্ত্রোপচারের আগে কোনো টিউমারের আকার কমাতে, অস্ত্রোপচারের পরে অবশিষ্ট ক্যান্সার কোষকে নির্মূল করতে ইত্যাদি।
এক এক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসায় শরীরের এক এক জায়গায় রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। যেমন- মুখ এবং গলার ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা হলো রেডিওথেরাপি। তেমনি স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও রেডিয়েশনের দরকার হয়। তেমনি এ রকমভাবে প্রায় প্রতিটি জায়গায়, প্রতিটি অঙ্গের ক্ষেত্রেই রেডিয়েশনের ভূমিকা রয়েছে। কোনো কোনো ক্যান্সার চিকিৎসার প্রাথমিক অবস্থাতেই এটা দেওয়া হয়।
কোথাও অন্য চিকিৎসার পাশাপাশি চলে। প্রথমদিকে ডিপ এক্সরে থেরাপি দিয়ে করা হতো। তবে এখন আধুনিক লিনিয়ার এক্সেলেটর-ভিত্তিক চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা। নতুন এই পদ্ধতিতে টিউমারের চিকিৎসা যেমন করা হয় সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক কোষকেও সুরক্ষা দেয়।
শুরুতে রোগটি অল্প দিয়ে শুরু হয় তারপর আস্তে আস্তে পাশের জায়গাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আগের চিকিৎসা পদ্ধতির সময় স্বাভাবিক কোষ ও এর মধ্যে পরত।

আক্রান্ত স্থানসহ আশপাশের অংশেরও চিকিৎসা করতে হতো। ফলে স্বাভাবিক কোষকে আলাদাভাবে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হতো না। বর্তমানের রেডিয়েশন থেরাপিতে স্বাভাবিক কোষ অল্পই থাকে। যেসব জায়গায় মাইক্রোস্কোপিকভাবে ক্যান্সার কোষ থাকার আশঙ্কা থাকে। দূরের জায়গাগুলো সুরক্ষিত রাখে। সঠিক ডোজ প্রয়োগ করতে না পারলে আক্রান্ত মানুষটি সুস্থ হবে না।
সেই ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে ধারণাটা এমন যে কোনো একটি আলো দিয়ে জায়গাটিকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আগের রেডিয়েশন থেরাপিতে ত্বককে রক্ষা করা যেত না। ত্বক দেখলে মনে হতো ঝলছে গেছে। তবে নতুন যে টেকনোলজির রয়েছে তাতে ত্বকের ক্ষতি না করে থেরাপি দেওয়া হয়।
দেশের অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে উন্নত প্রযুক্তির মেশিন রয়েছে।

এই মেশিনের মাধ্যমে একদম আধুনিক যে পদ্ধতি, সেই পদ্ধতিতে রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়। তবে রেডিয়েশন থেরাপি অভিজ্ঞ রেডিয়েশন অনকোলজিস্টদের কাছে দিতে হবে।
যারা মেশিনটিকে কীভাবে চালাতে হয় এবং ডোজের পরিমাপটা সঠিকভাবে দিতে জানে। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত।
স্বাগতম- নতুন করে ঠিকানাটা দেখে দিন। প্রথম কার্যদিবসেই জাতীয় দৈনিক পেপারে ছাপা হবে আপনার লেখা।
 
লেখক : অধ্যাপক ও পরিচালক, বিভাগীয় প্রধান, রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, চেম্বার
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
(২য় তলা)
সিরিয়াল পেতে ০১৩০১-২৫৪-৯২৪, ০২-৯১৪৩২৬

×