ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

ডেঙ্গুজ্বরে করণীয় এবং চিকিৎসা

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত: ০১:০০, ৪ অক্টোবর ২০২২

ডেঙ্গুজ্বরে করণীয় এবং চিকিৎসা

ডেঙ্গুজ্বরে করণীয় এবং চিকিৎসা

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে এমনকি ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হচ্ছে পত্রিকায়। ডেঙ্গু ভাইরাস সৃষ্ট মশাবাহিত রোগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু আক্রমণে তেমন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। প্রতি চারজনের মাঝে বলা যায় একজনের লক্ষণ দেখা দেয়। কারও দেখা দেয় মৃদু, কারও ভয়ানক লক্ষণ। মৃদু লক্ষণগুলো অন্য সাধারণ ভাইরাসজনিত রোগের মতোই।
ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ : ডেঙ্গুর সচরাচর যেসব লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো হলো জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখে বিশেষত চোখের পেছনের দিকে ব্যথা, মাংসপেশি, হাড় এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা। রোগীদের কেউ কেউ বলে থাকে পেটানো ব্যথা। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে ব্রেক-বোন ফিভার- হাড়ভাঙ্গা জ্বর। চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ, ক্ষুধা মন্দা, বমি, পাতলা পায়খানা, দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণ ও প্রকাশ পায় ডেঙ্গু আক্রমণে।
জ্বর, মাথাব্যথা এবং চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ এই তিনটিকে বলা যায় ডেঙ্গুর উপসর্গ-ত্রয়ী। বলা যায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান তিন উপসর্গ। এসব উপসর্গ সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এক সপ্তাহের মাঝে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
ডেঙ্গুর ভয়ানক বিপদচিহ্ন : তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ভয়ানক কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় ডেঙ্গুর আক্রমণে। যেগুলো তীব্রমাত্রার ডেঙ্গু নির্দেশ করে সেগুলো হলো পেটে ব্যথা, দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া, নাক কিংবা দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, প্রচ- দুর্বলতা, অস্থিরতা, খিটখিটে ভাব, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, তাপমাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন, অনেক তাপমাত্রা থেকে হঠাৎ এমনকি স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া, বিগত চার থেকে ছয় ঘণ্টার প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, রক্তের হেমাটোক্রিট ২০% কমে যাওয়া, রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা অত্যন্ত নিচে নেমে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
তীব্র ডেঙ্গু হলে হাসপাতাল : তীব্র ধরনের ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ পেলে বাসায় চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। মনে রাখবেন তীব্র ডেঙ্গু এক ধরনের মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি। এসব রোগীদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা নিতে হবে। গড়ে প্রতি ২০ জনে একজন তীব্র ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। তীব্র ডেঙ্গুতে রক্তচাপ কমে রোগী শকে চলে যেতে পারে। রোগীর আভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকে শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ।

যাদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে তাদের দ্বিতীয় আক্রমণে তীব্র ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ সময় রক্তের অনুচক্রিকা খুব দ্রুতগতিতে কমে যেতে পারে। সেজন্য প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করে অনুচক্রিকার পরিমাণ জানতে হয়। এই সংখ্যা ৫০ হাজারের নিচে নেমে গেলে দিনে অন্তত দুইবার অনুচক্রিকা পরীক্ষা করা দরকার। সঙ্গে নজর রাখতে হবে ডেঙ্গুর ভয়ানক উপসর্গের দিকে।
 ডেঙ্গুর চিকিৎসা : ডেঙ্গুর কোন নির্ধারিত চিকিৎসা নেই। প্রকাশিত লক্ষণের সঙ্গে চিকিৎসা করতে হবে রোগীদের। সেজন্য কারও ডেঙ্গু হলে করণীয় হলো পূর্ণ বিশ্রাম। শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম গ্রহণ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শরবত, ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ, স্যালাইন পানি ও পানীয় পান করতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল সেবন করতে হবে। এসপিরিন, আইবোপ্রোফেন কিংবা ব্যথা-বেদনানাশক বড়ি গ্রহণ করবেন না।

এগুলো ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণ জনিত জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডেঙ্গুজ্বর চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর যদি শরীর আরও বেশি খারাপ হতে থাকে তবে অবশ্যই সতর্ক হোন। রক্ত পরীক্ষা করে অনুচক্রিকা এবং হেমাটোক্রিটের পরিমাণ জেনে নিন। রক্তের অনুচক্রিকা কমতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসুন। রক্তের অনুচক্রিকা দশ হাজারের নিচে নেমে গেলে কিংবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত প্রদান করতে হয়। রক্তের অনুচক্রিকা বৃদ্ধির জন্য পেঁপে, পেঁপে পাতার রস, দুধ, ডালিম ইত্যাদি খেতে হবে। পেঁপে পাতার রস অনুচক্রিকা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
তবে ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের দিকে নজর দিতে হবে বেশি। পরিবেশকে রাখতে হবে মশকমুক্ত। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে হবে নিজেকে এবং সমাজকে।

লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ।
চেম্বার : আল রাজী হাসপাতাল (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫ ও ০১৭২৬০৫০৯১২

×