
সংগৃহীত
বলিউড সংগীত শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি সংস্কৃতি, আবেগ ও আত্মপরিচয়ের প্রতিফলন। সময় বদলেছে, তবে বদলায়নি ৯০-এর দশকের সুরের আবেদন। সোশ্যাল মিডিয়া-ভিত্তিক আজকের গানগুলো যতই ভাইরাল হোক না কেন, এখনও বহু প্রজন্মের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কেটে রয়েছে সোনালি দশকের সেই মেলোডিগুলো। বিয়ে, ড্রাইভ, একাকী সন্ধ্যা-সবখানেই জায়গা করে নেয় ৯০-এর দশকের গান।
কীভাবে ৯০-এর দশক বলিউড সংগীতকে আলাদা করেছিল?
৯০-এর দশক ছিল বলিউড সংগীতের এক সৃজনশীল জাগরণের সময়। তখন সুরই ছিল রাজা। গানের ভিত্তি ছিল মিষ্টি সুর, আবেগঘন কথা আর শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। কুমার শানু, অলকা ইয়াগনিক, উদিত নারায়ণ, সোনু নিগম, অভিজিৎ, সুনিধি চৌহান,তাঁদের কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছিল একের পর এক স্মরণীয় গান। সুরকারদের মধ্যে নাদিম-শ্রবণ, জতিন-ললিত, অনু মালিক,তাঁদের হাতে তৈরি হত মিষ্টি সুরে গাঁথা হৃদয়স্পর্শী গান, যা সিনেমার পরেও শ্রোতার মনে থেকে যেত।
‘তুঝে দেখা তো’, ‘পেহলা নশা’, ‘সাঁসোঁ কি জ়রুরত হ্যায় জ়্যায়সে’,এসব গান কেবল গান নয়, একেকটি আবেগের রূপ। সেগুলোর সরলতা, রোমান্স আর সত্যনিষ্ঠা এখনও শ্রোতাকে টানে।
কথা ছিল হৃদয়ের, এখন কেবল ভাইরাল হুক
৯০-এর দশকের গানে যে গভীরতা ছিল, তা ছিল মূলত কথার জাদুতে। সমীর, জাভেদ আখতার, গুলজার,তাঁদের লেখা গান হৃদয় ছুঁয়ে যেত। ‘আয় কাশ কে হম’, ‘তড়প তড়প কে’,এসব গান জীবনের গল্প বলে।
তার বিপরীতে আজকের গানের কথায় সেই আবেগ কম, ট্রেন্ডি হুক লাইনের প্রাধান্য বেশি। ‘নাচ মেরি রানি’, ‘কোকা কোলা তু’, ‘কালা চশমা’,গানগুলো মজার হলেও, সেই হৃদয়ের ছোঁয়া পাওয়া যায় না। গান যেন এখন স্ক্রল করার জন্য, হৃদয় ছোঁয়ার জন্য নয়।
রিমিক্স: পুরোনো সুরের পুনর্জন্ম না অবমূল্যায়ন?
আজকের বলিউড সংগীত দৃশ্য জুড়ে রিমিক্সের রাজত্ব। ‘দিলবর’, ‘টিপ টিপ বরসা পানি’-র মতো কিছু রিমিক্স নতুন প্রজন্মকে পুরোনো সুরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেও অনেক ক্ষেত্রেই সমালোচনার মুখে পড়েছে। মূল গানের আবেগ হারিয়ে গেছে চকচকে চিত্রায়ন আর দ্রুতগতির বিটে।
কুমার শানুর ভাষায়, “গান বদলে গেছে ঠিকই, তবে পুরোনো সুরকে আধুনিক সংগীতের সাথে মিশিয়ে ফেলা উচিত। এতে নতুন প্রজন্ম পুরোনো গান শুনে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারে।”শালমালি খোলগাড়ে যদিও বলেন, “আজও অনেক সুন্দর মেলোডি-নির্ভর গান তৈরি হচ্ছে, শুধু তারা কতটা জনপ্রিয় হয়, সেটাই প্রশ্ন।”
কেন মিলেনিয়াল আর জেন এক্স এখনও ভালোবাসে ৯০-এর গান?
যারা ৯০-এর দশকে বড় হয়েছে, তাদের জন্য এই গানগুলো শুধুই গান নয়,স্মৃতি। ক্যাসেট, দূরদর্শনের কাউন্টডাউন শো, পারিবারিক সিনেমা রাত,সবই যেন ফিরে আসে এসব গানে। আজকের প্রজন্মও রেট্রো প্লেলিস্ট, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম রিলের মাধ্যমে এই গানগুলো আবিষ্কার করছে নতুন করে।
‘চুরা কে দিল মেরা’ থেকে ‘তুম মিলি দিল খিলে’,নস্টালজিয়া আজও রাজত্ব করছে। রেডিওতে রেট্রো সেগমেন্ট, পার্টিতে ৯০-এর সিঙ্গ-আলং, রিলসে ক্লাসিক গানের ব্যবহার-সবই প্রমাণ করে, আবেগময় সুর কখনও পুরোনো হয় না।
আরিজিত সিং, শ্রেয়া ঘোষাল, জুবিন নওটিয়াল,তাঁদের গান এখনও হৃদয় ছোঁয়। ‘তেরা ইয়ার হুঁ ম্যায়’, ‘রাতাঁ লম্বিয়ান’ এর মতো গান প্রমাণ করে সুর এখনও বাঁচে।তবে সামগ্রিকভাবে আধুনিক সংগীতে ইডিএম, অটো-টিউন আর ট্রেন্ডি লিরিকসই বেশি। ভাইরাল হওয়ার দৌড়ে আবেগ অনেক সময় হারিয়ে যায়।
দুই যুগ কি পাশাপাশি চলতে পারে?
৯০-এর দশক আমাদের দিয়েছে হৃদয় ছোঁয়া সুর, আজকের যুগ দিয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর চমক। দু’য়ের মধ্যেই ভারসাম্য থাকাটা জরুরি। যান্ত্রিক নয়, হৃদয়ভরা সুরই কালজয়ী হয়।
শালমালি বলেন, “আমি আগের যুগ ফিরিয়ে আনতে চাই না। বরং নতুন সংগীত বুঝতে চেষ্টা করি। সৃষ্টিশীলতার স্বাভাবিক গতি বুঝেই এগিয়ে যেতে চাই।”
শেষ পর্যন্ত, ভালো সংগীত কোনো দশকের সম্পত্তি নয়,এটি সময় ছাড়িয়ে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকে।
সূত্র:https://tinyurl.com/yfw8yt42
আফরোজা