.
গুরু নাট্যকার, নির্দেশক মামুনুর রশীদকে নিজ হাতে এঁকেছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। আর জন্মদিনে গুরুর হাতে তুলে দিয়েছেন সেই চিত্রকর্ম। এ ছাড়া অভিনয়ের পথে আলো দেখানোর জন্য গুরুর প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানালেন এই শিষ্য। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। মামুনুর রশীদের জন্মদিন উপলক্ষে নাট্য উৎসবের আয়োজন করেছে আরণ্যক নাট্যদল। উৎসবের সূচনাপর্বের আগে মামুনুর রশীদের হাতে চিত্রকর্মটি তুলে দেন চঞ্চল।
এ সময় চঞ্চল বলেন, আমি চারুকলায় পড়েছি। মামুনুর রশীদের সংস্পর্শে না এলে আমি হয়তো ছবি আঁকতাম, কিংবা চাকরি করতাম। আমার অভিনয়ের এই যে পথচলা, তার ভিতটা গড়ে দিয়েছেন আমার গুরু মামুনুর রশীদ এবং আমার নাট্যদল আরণ্যক। সৃষ্টিশীল যে কোনো সাধনা করতে গেলে গুরু লাগে, আমার অভিনয় গুরু মামুনুর রশীদ। তার জন্মদিন উপলক্ষে নিজের হাতে তার ছবি এঁকেছি, এটা ক্ষুদ্র গুরুদক্ষিণা। অনুষ্ঠানে মামুনুর রশীদ বলেন, আমার খুব কষ্ট হয়Ñ যখন দেখি গুরু-শিষ্য পরম্পরায় ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নাটকের ক্ষেত্রে দেখেছি, আমি ছাড়াও যারা নাটকের শিক্ষক আছেন বা গুরু আছেন, এই গুরু-শিষ্যের পরম্পরার সম্পর্কটা এখনো সঠিক আছে। আমাদের সম্পর্কগুলো এখনো ঠিক পথেই আছে। নিজের শিষ্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ধরন নিয়ে এই নাট্যকার বলেন, আজকে চঞ্চল আমাকে একটা ছবি উপহার দিয়েছে, সে বলেছে এটা হলো গুরুদক্ষিণা। গুরুদক্ষিণার দিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, একবার আমার একটা দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছিল, আমার শিষ্যরা এসে পাশে দাঁড়িয়েছিল। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল। সেই পুরো টাকাটা দিয়েছিল আমার শিষ্যরা। তারা একদিনের মধ্যে পুরো টাকা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিল।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্যচর্চা নব-উদ্যমে যাদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম মামুনুর রশীদ। তার হাত ধরে মোমেনা চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু, চঞ্চল চৌধুরী, আজিজুল হাকিম, তমালিকা কর্মকার, আ খ ম হাসান, জয়রাজ, শামীম জামানসহ অনেক তারকাশিল্পীর অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার এই জন্মোৎসব ঘিরে নাট্যশালা প্রাঙ্গণ সাজানো হয় ব্যানার, ফেস্টুন আর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নানা উপকরণ দিয়ে। তিন দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী ফরদৌসী মজুমদার। উৎসবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত বিভিন্ন নাটকের অংশবিশেষ মঞ্চস্থ হয়। এ ছাড়া সংগীত, নৃত্য, সেমিনার, প্রদর্শনী ও থিয়েটার আড্ডায় জমজমাট হয়ে ওঠে উৎসব।