ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘ইরফান খান’ একটি নক্ষত্রের নাম

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৩০ এপ্রিল ২০২০

‘ইরফান খান’ একটি নক্ষত্রের নাম

অবশেষে চলেই গেলেন ইরফান খান। মহামারীর কালো আকাশে রেখে গেলেন তার একরাশ অপূর্ণতা। অসুস্থ হয়ে গত মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। মাত্র তিন দিন আগে ইরফান খানের মা মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তার মা সাইদা বেগম। গত শনিবার রাতে ভারতের জয়পুরে তিনি মারা যান। মায়ের মৃত্যুর এ সময়ে পাশে থাকতে পারেননি ইরফান খান, শেষ দেখাও হয়নি। তবে ভিডিওকলে মায়ের দাফন কার্যক্রম দেখেছেন দূর থেকে। ইরফানের জন্ম রাজস্থানের জয়পুরে। তার পরিবার এখনও সেখানেই থাকে। সেখান থেকেই দিল্লীতে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় পড়তে আসেন। এরপর পাকাপাকিভাবে যোগ দেন বলিউডে। কেবল ভারতীয় চলচ্চিত্র নয় বরং সমসাময়িক বিশ্ব চলচ্চিত্রে এই মানুষটার পদচারণ ছিল উল্লেখযোগ্য। ‘সøামডক মিলিয়নিয়র’, ‘লাইফ অফ পাই’, কিংবা ‘সালাম বম্বে’, ‘মকবুল’, ‘লাঞ্চ বক্স’, পিকু, ‘হিন্দী মিডিয়াম’ কালজয়ী এ সব সিনেমার কথা এই মূর্হূতে মনে পরলে তার মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। চলচ্চিত্র শিল্পে ইরফান তার শাণিত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন সহজাত অভিনয় ক্ষমতার মধ্য দিয়ে। বলিউড, ব্রিটিশ ভারতীয়, হলিউড এবং তেলুগু চলচ্চিত্রে প্রভাবের সঙ্গে কাজ করছেন। ২০১২ সালের মার্কিন চলচ্চিত্র এ্যামেজিং স্পাইডার ম্যান এ অভিনয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হন অভিনয় শিল্পের এই মহতি। এরপর ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ছিল আর এক চমক। ১৯৮৮ সালের মীরা নায়ার পরিচালিত, একাডেমি পুরস্কার মনোনীত হিন্দী চলচ্চিত্র ‘সালাম বম্বে’ এ প্রথম অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমায় তিনি পদার্পণ করেন। চলচ্চিত্র জগতে ৩০ বছরের দ্যুতিমান যাত্রায় ইরফান খান প্রায় ৫০টির কাছাকাছি দেশী ও বিদেশী চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বারবার দর্শকদের বিমুগ্ধ করেন। ভারতীয় এবং আন্তর্জাতিক একাধিক পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছন। ২০১৮ সালে এক টুইটার পোস্টে এই অভিনেতা জানান যে, তিনি এনডোক্রাইন টিউমারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এটি এমন এক ধরনের রোগ যেটি রক্তে হরমোনের সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করে। পরে তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালেও চিকিৎসা নেন। ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলার দুই মাস পর তিনি এ বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন। যেখানে তিনি ক্যান্সারের চিকিৎসা নেয়ার সময় তার কষ্টের তীব্রতা এবং জীবনের অনিশ্চয় তার বিষয়টি তুলে ধরেন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তার ভক্তরা তাকে বাধ ভাঙা সমর্থন জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বলিউড তারকা এবং ভারতের রাজনীতিবিদরা। মি. খানের পিআর সংস্থা এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রিয়জন, পরিবারের সদস্য যাদের তিনি অত্যন্ত ভালবাসতেন, তার সব উত্তরাধিকারের মায়া পেছনে ফেলে তিনি স্বর্গে পাড়ি জমিয়েছেন। আমরা সবাই প্রার্থনা করছি তার আত্মা শান্তিতে থাকুক।’ সুপারস্টার অমিতাভ বচ্চন যিনি ‘পিকু’ চলচ্চিত্রে তার সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি এক টুইটারে বলেন, ‘চলচ্চিত্র দুনিয়ার এক অবিশ্বাস্য প্রতিভা...বিনীত সহকর্মী...কর্মঠ কর্মী... খুব জলদি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন...অনেক বড় শূন্যতা তৈরি করে দিয়ে চলে গেলেন।’ বলিউড অভিনেত্রী রাভিনা ট্যানডন এক টুইটে বলেছেন, ‘চমৎকার একজন সহ-অভিনেতা, অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন অভিনেতা এবং একজন সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন তিনি।’ ভারতে টুইটারের টপ ট্রেন্ডের প্রথম চারটিই ইরফান খান বিষয়ক। অনেকেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।পান পান সিং তোমার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১৩ সালে মি খান ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ওই চলচ্চিত্রটি একজন এ্যাথলেটের জীবনী নিয়ে করা যিনি পরবর্তীতে ডাকাত হয়েছিলেন। নিশ্চয়ই তার অকাল মৃত্যু বিশ্ব চলচ্চিত্রের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আনন্দকণ্ঠ প্রতিবেদক
×