ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

ফোন ধরতে পারেননি, মেইলও পাননি, চবি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভোগান্তি

রেফায়েত উল্যাহ রুপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৭ জুলাই ২০২৫

ফোন ধরতে পারেননি, মেইলও পাননি, চবি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ভোগান্তি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার খবর না জানায় পরীক্ষা দিতে আসতে পারেনি একাধিক চাকুরি প্রত্যাশী। তারা দাবি করেন, বিদেশে অবস্থান করায় তাদের ব্যবহৃত বাংলাদেশি সিমটি কার্যকর ছিলোনা। ফলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা কোন ফোন পাননি। এছাড়া তাদেরকে কোন মেইলও দেওয়া হয়নি। শনিবার (২৬ জুলাই) চবি উপাচার্যের কার্যালয়ের সিনেট কক্ষে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের প্রভাষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। 

জানা যায়, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লিখিত, প্রেজেন্টেশন ও ভাইভার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় প্রভাষক পদে ৯ টি বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে মোট ৪১ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৩ জন ডাক পান পরবর্তী ধাপ প্রেজেন্টেশন ও ভাইভার জন্য। আগামী ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত চবির সিন্ডিকেটে এদের থেকেই শিক্ষক নেওয়া হবে। তবে লিখিত পরীক্ষায় ৪১ জন অংশগ্রহণ করলেও একাধিক চাকুরি প্রত্যাশী পরীক্ষার তারিখ জানতেন না। ফলে তারা নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চাকুরি প্রত্যাশী জানান, ‘আমি বেশ কয়েকবছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করছি। ২০২১ সালে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে আবেদন করি। তবে এই আবেদনের পর দীর্ঘদিন ধরেই পরীক্ষা হয়নি। আজকে  আমার কয়েকজন বন্ধুর ফেসবুক পোস্টে জানতে পারলাম পরীক্ষার বিষয়ে। জিগ্যেস করার পর তারা বললো ফোন করা হয়েছিল তাদের। আমার বাংলাদেশি সিমটি কার্যকর ছিলোনা। ফলে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা কোন ফোন পাইনি। এছাড়া আমাকে কোন মেইলও দেওয়া হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ আমার জানতে ইচ্ছে হয় প্রশাসনের কি উচিত ছিলোনা অন্ততপক্ষে একটা মেইল করা! আসলে কি বলবো, আমাদের সিস্টেমই এমন। উনারা তো অন্তত ১৫ দিন আগে মেইল দিয়ে জানানো উচিত ছিল। না জানার কারনে হয়তো আমার মতো অন্য কারো স্বপ্নও ছোঁয়া হলো না!’

তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ পরীক্ষায় বিজ্ঞাপিত পদ ছিল ৯ টি। ২০১৮ সালে প্রভাষক পদে ৪ জন এবং ২০২১ সালে একই পদে আরও ৫ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন। ২০১৮ সালে প্রভাষক পদে ৪ জন নিয়োগ হলেও সেটি অনুমোদন করেনি সিন্ডিকেট। ফলে নতুন প্রশাসন ২০২৫ সালে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে পূর্বে আবেদনকারীরাও বিজ্ঞাপিত পদে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। 

তিনটি বিজ্ঞাপনের প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়ার কারনে প্রায় শতাধিক আবেদন পড়ে। এরমধ্য অনেকেই বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত যোগ্যতা পূরণ না করেই আবেদন করেছেন। অনেকে আবার একাধিকবারও আবেদন করেছেন। ফলে আবেদনের সংখ্যা বেশি হলেও বাছাইয়ের পর প্রার্থী সংখ্যা কমে এসেছে। 

এদিকে একাধিক সূত্র দাবি করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুদিন আগে নিয়োগ পরীক্ষাটি স্থগিত করেছে। হঠাৎ করেই আবার তারা পরীক্ষার তারিখ ঘোষনা করে। ফলে অনেক চাকুরি প্রত্যাশী পরীক্ষা দিতে আসতে পারেনি।

এবিষয়ে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘ এখানে প্রভাষক পদে ৯ জনের জন্য মোট তিনবার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকেই একাধিকবার আবেদন করেছে। আবার অনেকে ৮ বছরে অন্যকোথাও চাকুরিতে প্রবেশ করেছে। কেউ বিদেশে আছে। একারনেই আবেদনের বেশি হলেও প্রার্থী কমে এসেছে। আবার অনেকে লিখিত পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন থাকায় ইচ্ছা করেও আসেনি। আমার কাছে মনে হয় উপস্থিতির পিছনে এটা একটা নিয়ামক ছিল।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য ও চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘ আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে যখন সবকিছু সঠিক পেয়েছি তখনই কেবল পরীক্ষা পরিচালনা করতে গিয়েছি। রেজিস্ট্রার মহোদয় আমাদের নিশ্চিত করেছেন উনারা সকল প্রার্থীর সাথে যোগাযোগ করেছেন। এরপরই আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরীক্ষা পরিচালনা করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটি বিষয় হলো অনেকগুলো আবেদন থাকলেও চূড়ান্তভাবে প্রার্থী সংখ্যা কমে এসেছে। কারন বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে শুধুমাত্র ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, ফিন্যান্স বিভাগ আবেদন করতে পারবে। সেখানে একাউন্টিং, অর্থনীতির শিক্ষার্থীরা আবেদন করেছে। আবার কেউ কেউ কয়েকবার আবেদন করেছে। এখানে মূলত যারা বলছেন এতজন আবেদনকারী অনুপস্থিত, উনারা সঠিক তথ্য না জেনেই এসব বলছেন।’

জানতে চাইলে চবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ আমি নিজে আগের দিনের নিয়োগ পরীক্ষার প্রার্থীদের ফোন করেছি। আজকের (শনিবার) পরীক্ষায়ও সবাইকে আমাদের অফিস থেকে কল করা হয়েছে। আমি আমি কয়েকবার করে এবিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই উপস্থিত হয়েছেন। অনেকের সাথে আমরা যোগাযোগই করতে পারিনি। তারা কখনোই ফোন ধরেনি। ভবিষ্যতে আমরা ই-মেইলের মাধ্যমেও প্রার্থীদের জানিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিবো।’

আঁখি

×