
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে।
চবির সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে চীনের প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সেকেন্ড ইনস্টিটিউট অফ ওশানগ্রাফির (এসআইও) যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন হচ্ছে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রায় ৬০ কোটি টাকার কারিগরি ও যান্ত্রিক সহায়তা দিচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্টেশনটির পরিচালনায় লোকবল, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গবেষকসহ অন্যান্য ইনকাইন্ড সেবা প্রদান করবে।
ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনের ফলে যে যে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ :
এই গ্রাউন্ড স্টেশনের ফলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস প্রদানে সক্ষমতা বাড়বে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্রবিন্দু ধরে এই স্টেশন চীনের স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। স্টেশনটি উপকূলীয় এলাকার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হবে। এটি দ্রুত নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এতে দেশের সমুদ্র ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থাকে তথ্য, পূর্বাভাস, সতর্কতা ও পরামর্শ দেওয়া সম্ভব হবে।
সমুদ্র অর্থনীতিতে আসবে নতুন জোয়ার :
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগেই চারটি ফিশিং জোন চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে এসব জোনে নিয়মিত মাছ ধরা হচ্ছে কি না—তা নিশ্চিত নয়। ২০১০ সালের পর বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা জয় করলেও ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন না থাকায় মৎস্যসম্পদসহ সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে সম্ভাব্য মাছ ধরার অঞ্চল (পটেনশিয়াল ফিশিং জোন) শনাক্ত করার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাউন্ড স্টেশন চালু হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, স্রোতের গতি এবং ক্লোরোফিল ঘনত্বের মতো তথ্য নিয়মিতভাবে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। এর ফলে সাইক্লোন ট্র্যাকিং, উপকূলীয় বন্যা মডেলিং, জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি মাছ ধরার অঞ্চলগুলো পুনর্বিন্যাস করে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যাবে। এতে মাছ ধরার উপযুক্ত এলাকা চিহ্নিত করে টেকসই মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করবে। এছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার তথ্য বিশ্লেষণ করে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানেও সহায়তা পাওয়া যাবে। এই উদ্যোগটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৪ নম্বর লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
সিভিল ওয়ার্কের ৭০ শতাংশ শেষ, আগস্টেই শুরু টেকনিক্যাল কাজ :
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চবিতে নির্মাণাধীন ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনের সিভিল ওয়ার্কের প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ। এখন প্লাস্টারের কাজ চলছে। অন্যান্য কাজগুলো দ্রুতই শেষ করা হবে। আর টেকনিক্যাল কাজের যন্ত্রাংশও চীন থেকে জুলাইয়ের ২ তারিখে শিপমেন্ট হয়েছে। আগামী ১৯ - ২০ জুলাই এগুলো এসে পৌঁছাবে। এরপরে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে।
প্রকল্পের সমন্বয়ক চবির সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘ প্রকল্পটি একটি অত্যাধুনিক সুবিধা তৈরি করবে, যা সমুদ্র গবেষণা, জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসবে। যারা এটি নির্মাণ করছেন তারা কিন্তু প্রতিদিনই কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে আমাদের এখানে সিভিল ওয়ার্কের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই টেকনিক্যাল কাজও শুরু হবে।’
চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ চবিতে যে ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন হচ্ছে সেটা আমাদের অন্যতম বৃহৎ একটা কাজ। আমরা দেখছি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজটি করছেন। বর্তমানে অবকাঠামোগত অর্থাৎ ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা আশা করছি এই কাজটি দ্রুতই শেষ হবে।’
উল্লেখ্য, এবছরের ২৬ মার্চ গ্রাউন্ড স্টেশনটির নির্মাণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।
মিরাজ খান