ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ইবিতে নগ্ন করে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিং

ইবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২০:২৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪; আপডেট: ২০:৪০, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ইবিতে নগ্ন করে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিং

অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ কর্মী মুদাচ্ছির খান কাফি ও মোহাম্মদ সাগর

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক শিক্ষার্থীকে রাতভর র‌্যাগিং, নগ্ন করে রড দিয়ে মারধর, পর্নগ্রাফী দেখানো ও টেবিলের উপর কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার রাতে লালন শাহ হলের গণরুমে (১৩৬ নং কক্ষ) রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। পরে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি ঘরোয়াভাবে সমাধান করায় এবং ‘বিশেষ চাপে’ প্রশাসনের কাছে কোন অভিযোগ করেননি ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী। শুধু সেই দিনই নয়। একই কক্ষে প্রায়শই র‌্যাগিং হয় বলে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। 

ভূক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা হলেন- শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মুদাচ্ছির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাগরসহ অন্তত ৫ জন। তারা উভয়ই ছাত্রলীগকর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬নং কক্ষে কিছু সিনিয়র পরিচয়পর্বের নামে ভূক্তভোগীকে ডাকেন। পরিচয়ের এক পর্যায়ে শুরু হয় র‌্যাগিং। এসময় ভূক্তভোগীর বাবা-মা তুলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে সিনিয়ররা। একপর্যায়ে ভূক্তভোগীকে অশ্লীল অঙ্গিভঙ্গি করতে বাধ্য করা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থী এসব করতে অস্বীকৃতি জানালে লোহার রড দিয়ে পেটাতে থাকেন অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে সিনিয়ররা ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক উলঙ্গ করে টেবিলের উপর দাঁড় করিয়ে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে রাখেন। এছাড়াও উলঙ্গ অবস্থায় সিনিয়ররা তাকে পর্নগ্রাফি দেখতে বাধ্য করেন। 

এসময় তাকে ‘নাকে খত’ (মাটিতে নাক ঘষে নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করা) দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে অভিযুক্তরা। এসময় তাকে ভয় দেখিয়ে ৩/৪ বার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। নির্যাতনের সময় অভিযুক্তরা ভূক্তভোগীকে শাসাতে থাকেন। তারা বলেন, ‘তোরা আমাদের চিনিস? আমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানিস?’ এছাড়াও ঘটনা বাইরে না জানাতে ভূক্তভোগীকে হুমকি দেন।

এদিকে, ঘটনার পরদিন শাখা ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান হাফিজ ও নাসিম আহমেদ মাসুম সমাধান করে দেন। এসময় অভিযুক্তদের চড় থাপ্পড় মারেন হাফিজ। এছাড়াও তার নির্দেশে ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চান অভিযুক্তরা। এছাড়া রাতে লালন শাহ হলে আবারো অভিযুক্তদের নিয়ে বসেন শাখা ছাত্রলীগ কর্মী শাহিন আলম, মাসুম ও লিখন। এসময় অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর মাঝে সমঝোতা করে দেন। ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সিনিয়র ও জুনিয়রের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল বলে জানান তিনি।

অভিযুক্ত সাগর বলেন, ‘এরকম কিছু হয়নি। আমি সেদিন হলের বাইরে ছিলাম। এদিকে কথার একপর্যায়ে তিনি পাশের রুমে ছিলেন বলে জানান। অভিযুক্ত কাফিকে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘কারো ব্যক্তিগত কাজের দায় সংগঠন নেবে না। ঘটনা শোনার পর আমি ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীর জন্য হলে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা সবসময় ভুক্তভোগীর পাশে আছি।’

এদিকে, ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। 

প্রসঙ্গত, এর আগেও গত বছরের জুনে একই হলে ১৩৬ নং কক্ষে এক ছাত্রকে বিবস্ত্র করে র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের চাপে ভুক্তভোগী অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হয়।

 

এম হাসান

×