ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

সুপারিশ ঠেকাতে পিএসসির নতুন উদ্যোগ

৪৪তম বিসিএসে ৫০০ পদে রিপিট ক্যাডার

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ০০:১৮, ৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০০:২৬, ৪ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসে ৫০০ পদে রিপিট ক্যাডার

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন

৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশের পর অন্তত ৫০০ পদে রিপিট ক্যাডার হয়েছেন অনেকে। অর্থাৎ আগে কোনো কর্মকর্তা যে ক্যাডারে চাকরি করতেন নতুন করে এই বিসিএসে একই ক্যাডারে সুযোগ পেয়েছেন। এতে অন্তত ৫০০ ক্যাডার পদ খালি থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদিকে রিপিট ক্যাডার বা একই ক্যাডারে দুইবার সুপারিশ ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

চাকরিপ্রার্থীরা জানান, ৪৪তম শিক্ষা ক্যাডারে ৩৫-৪০ শতাংশের বেশি রিপিট ক্যাডার। আর লাইভস্টকে রিপিট ক্যাডার হতে পারে অন্তত ৫০ শতাংশ। ফলে এসব পদে কেউই যোগদান করবেন না। গেজেটের পর পদগুলো শূন্য থেকে যাবে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা। তারা পিএসসির সামনে অবস্থান কর্মসূচি করার ঘোষণাও দিয়েছেন।

এছাড়া নন-ক্যাডার থেকে খালি পদে নিয়োগেরও সুপারিশ করেছেন। তবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, এ বিষয়ে তাদের কোনো দায় নেই। কারণ কোন পরীক্ষার্থী কোথায় চাকরি করেন আর কি চয়েজ দেন তা আগে থেকে জানার সুযোগ নেই। 

গত ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে পিএসসি। এ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিতে ১ হাজার ৭১০টি পদ থাকলেও ১ হাজার ৬৯০টি পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। বাকি ২০টি কারিগরি বা পেশাগত পদে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় সুপারিশ করতে পারেনি পিএসসি। এ বিসিএসে সবচেয়ে বেশি ৭৭৬টি পদ ছিল সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে। এছাড়া প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০, পুলিশে ৫০, পররাষ্ট্রে ১০, আনসারে ১৪, নিরীক্ষা ও হিসাবে ৩০, পরিবার পরিকল্পনায় ২৭ জন নিয়োগের কথা ছিল।

তবে রিপিট ক্যাডার বিষয়টি সামনে আসায় এ নিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী বিষয়টি বিবেচনার কথা বলছেন। তাদের মধ্যে দুজন নাম প্রকাশ না করে জানান, তারা মোবাইল ফোনে কথা বলে এবং ফেসবুকে যে তথ্য পেয়েছেন তাতে অন্তত পাঁচশতাধিক প্রার্থীকে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের শতভাগ ৪৪তম বিসিএসের সুপারিশে চাকরিতে যোগ দেবেন না। ফলে ১ হাজার ৬৯০ জন সুপারিশপ্রাপ্তের মধ্যে গেজেটের আগেই ৫০০-এর বেশি প্রার্থী নিজেদের প্রত্যাহার করে নেবেন। এতে যারা মৌখিক পরীক্ষায় পাস করেও ক্যাডার হতে পারেননি তাদের নিয়োগ দেওয়া উচিত হবে বলেও মনে করেন তারা।

সাধারণত একটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির পর তা শেষ করতে সাড়ে তিন থেকে চার বছর  লেগে যায়। এতে যে প্রার্থী ৪১তম বিসিএসে আবেদন করেছেন তিনি চূড়ান্ত ফল পাওয়ার আগেই আবার ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করেছেন। কেউ কেউ আবার ৪৪তম বিসিএসেও ওই সময়ের মধ্যে আবেদন করেছেন। ফলে তারা কেউই তখন কোনো ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত নন। এজন্য তারা সব বিসিএসেই প্রায় একই রকম চয়েজ (পছন্দ) দিয়েছেন।

কীভাবে রিপিট ক্যাডার সুপারিশ এড়ানো যায়, তা নিয়ে বিভিন্নজন নানান মতামত দিচ্ছেন। তবে প্রার্থীদের দাবি, বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগে যারা মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন তখন তাদের চয়েজ ফরম পুনরায় সংশোধন বা পরিমার্জন করার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাহলে এ বিড়ম্বনা কমবে।

শিক্ষা ক্যাডারে ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শাহদুদুজ্জামান বলেন, ‘আমি ৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই ৪৪তম বিসিএসে আবেদন করেছি, চয়েজ ফরম পূরণ করেছি। ফলে ৪৩তম বিসিএসে যেমন শিক্ষা ক্যাডার আমার পছন্দের তালিকায় ছিল তেমনি ৪৪তম বিসিএসেও শিক্ষা ক্যাডার রেখেছি।

যদি ৪৪তম বিসিএসের ভাইভার সময় আমাকে চয়েজ ফরম সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হতো তাহলে আমি শিক্ষা ক্যাডার আর রাখতাম না। কারণ আমি তখন অলরেডি শিক্ষা ক্যাডারে জয়েন করেছি। তাহলে হয় আমার ভিন্ন ক্যাডার আসত অথবা আসত না। 

রিপিট ক্যাডারের ছড়াছড়ি হলেও বিষয়টিতে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কোনো দায় নেই বলে দাবি করেছেন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, তারা প্রার্থীদের পছন্দক্রম এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করেছেন। ফল প্রকাশের আগে কে কোন ক্যাডারে চাকরিরত সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য থাকে না। ফলে এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া যায় না। জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) মাসুমা আফরীন বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

তবে মোবাইলে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেমকে পাওয়া যায়নি। পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এসএম মতিউর রহমান বলেন, ৪৩তম বিসিএসে কে কোন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে চাকরি করছেন সে তথ্য আমাদের কাছে থাকে না। এমনকি প্রার্থীরা কোন ক্যাডারে সুপারিশ চান না সে বিষয়েও কেউ আবেদন করেন না। ফলে এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পিএসসির হাতে থাকে না।

তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই নিয়মের পরিবর্তন চান স্বয়ং পিএসসির সদস্যরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এটা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, এটা জনপ্রশাসনের দায়িত্ব। তারা যদি মনে করে রিপিট ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তদের পদগুলো শূন্য হলে সেখানে নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশ করা সম্ভব। পিএসসিকে অনুমোদন দিলে এ কাজ করতে খুব বেশি সময়ও লাগবে না।

একই ক্যাডারে দুইবার সুপারিশ ঠেকাতে পিএসসির নতুন উদ্যোগ ॥ রিপিট ক্যাডার বা একই ক্যাডারে দুইবার সুপারিশ ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এখন থেকে মৌখিক পরীক্ষার আগে প্রার্থীরা পুণরায় চয়েজ ফর্ম (পছন্দক্রম পরিবর্তন) পূরণের সুযোগ পাবেন। আগামী ৮ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা থেকে এ নিয়ম চালু করা হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিএসসির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৮ জুলাই অনুষ্ঠেয় ৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার প্রার্থীদের জানানো যাচ্ছে যে, মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে একটি ‘ক্যাডার পছন্দক্রম পরিবর্তন ফর্ম’ পূরণ করে জমা দিতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শুরুর আগে প্রত্যেক প্রার্থীকে ওই ফর্ম সরবরাহ করা হবে এবং প্রার্থীকে তাৎক্ষণিকভাবে ফর্মটি পূরণ করে সাক্ষাৎকার বোর্ডে জমা দিতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, প্রার্থী আবেদনের সময় যে পছন্দক্রম দিয়েছিলেন, তা বহাল রাখতে পারবেন কিংবা চাইলে পরিবর্তন করতে পারবেন।

শহীদ

×