ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জাবি শিক্ষার্থী তুফান

টুটুল মাহফুজ

প্রকাশিত: ০১:২১, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জাবি শিক্ষার্থী তুফান

জাবি শিক্ষার্থী তুফান

শৈশব থেকেই লেখার চেয়ে ছবি আঁকাটাই বেশি টানত তুফান চাকমাকে। এই বয়সে যখন অন্যরা বর্ণমালার ওপরে হাত ঘোরান তখন এক টুকরা কাগজ কিংবা বইয়ের সাদা পাতা পেলেই পাহাড়ের কোলে, গাছের ছায়ায় বসে ছবি আঁকতেন। পাহাড়ের প্রকৃতি তাকে আঁকাআঁকির রসদ জুগিয়েছে, শিল্পী হিসেবে গড়ে উঠতে প্রেরণা দিয়েছে।
তুফান চাকমার বেড়ে ওঠা খাগড়াছড়ির দীঘিনালার উদালবাগান গ্রামে। এখন পড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। মা-বাবা ও দুই ভাইকে নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার। বাবা অশ্বত্থামা চাকমা একজন কৃষক, নিজেদের প্রয়োজনীয় ফসল নিজেরাই উৎপাদন করেন। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগানোর সামর্থ্য বাবার ছিল না। তবে তুফান থেমে থাকেননি। তাদের বংশে তিনিই প্রথম, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ-িতে পা রেখেছেন।
নিজের আঁকা ছবি তুফানকে দিয়েছে নিজস্ব পরিচয়। ছবির মাধ্যমে তিনি তুলে ধরছেন পাহাড়ি জীবন। আঁকাআঁকিই তার প্রতিবাদের ভাষা। ছবি এঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন নিয়মিত। নিজের ফেসবুক পেজ ‘তুফানস আর্টবিন’-এ ছবি পোস্ট করেন তিনি।
তুফানকে নিয়েই নতুন একটি খবর। তার ছবি এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। জাতিসংঘের ‘ইন্টারন্যাশনাল আর্ট কনটেস্ট ফর মাইনরিটি আর্টিস্ট ওয়ার্কিং অন ইন্টারসেকশনালিটি থিমস’ প্রতিযোগিতায় তরুণ আর্টিস্ট হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এই শিক্ষার্থী।
‘ইন্টারন্যাশনাল আর্ট কনটেস্ট ফর মাইনরিটি আর্টিস্ট ওয়ার্কিং অন ইন্টারসেকশনালিটি থিমস’ প্রতিযোগিতায় ৩৫টি দেশের ৮০ জন আর্টিস্ট অংশগ্রহণ করেন। যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে চারজনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। তারমধ্যে বাংলাদেশের তুফান চাকমা একজন। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার বাস্তবতা নিয়ে আঁকা কয়েকটি ছবি তুলে ধরেন তুফান।
অনুভূতি ব্যক্ত করে তুফান চাকমা বলেন, ২০১৪ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো পা রেখে ওই সময় থেকে নানা অভিজ্ঞতা এবং সংগ্রাম করে গ্রামের সহজ-সরল অক্ষরজ্ঞানহীন এক পরিবারের সন্তান হয়ে এই পর্যন্ত আসাটা মোটেও মসৃণ ছিল না। মা-বাবার অপ্রতিরোধ্য স্বপ্ন এবং নিজের ইচ্ছাশক্তি আমাকে মানুষের ভালোবাসা পেতে যেমন সাহায্য করেছে তেমনি নানা অর্জন আমাকে কাজের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বমঞ্চে নিজের জাতি এবং দেশকে উপস্থাপন করাটা আমার জীবনের এক আকাক্সিক্ষত স্বপ্নপূরণ, এটা হলফ করে বলতে পারি। 
এ অর্জনে সবার কাছ থেকে যে পরিমাণ ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা পাচ্ছি, তা আমার কাজের প্রতি নিষ্ঠা আরও শতগুণ বাড়াবে, বিশ্বাস করি।

×