ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ শিক্ষাবৃত্তি পেলো ১৫ শিক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী 

প্রকাশিত: ১৮:১৪, ৩১ মে ২০২৩; আপডেট: ১৮:১৫, ৩১ মে ২০২৩

বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ শিক্ষাবৃত্তি পেলো ১৫ শিক্ষার্থী

বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ শিক্ষাবৃত্তি

‘আমার পড়াশোনার খরচ চালাইতে বাবা-মায়ের খুব কষ্ট হয়। ঠিকমত খাতা-কলম কিনতে পারি না। আজকে বৃত্তি পেয়ে খুব ভালো লাগছে। এখন আর বাবা-মায়ের আগের মত কষ্ট করতে হবে না। এই বৃত্তির টাকা আমার পড়াশোনার কাজে লাগাবে। আমার ইচ্ছা আমি পড়াশোনা শেষ করে বিজ্ঞানী হবো। মানুষের জন্য কাজ করবো।’

নক্ষত্রের আলোকবর্তিকা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ’ শিক্ষাবৃত্তির চেক হাতে নিয়ে কথাগুলো বলছিলো রাজশাহীর তানোর উপজেলার কচুয়া উচ্চ বিদ্যলয়ের নবম শ্রেনীর যুথী হাঁসদা। কথা বলার সময় তার চোখেমুখে খুশি আর কণ্ঠে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখার মতই ব্যাপার ছিলো। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষ থেকে জনকণ্ঠকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রসন্ন মনে বাড়ি ফিরে গেল সে।

বুধবার (৩১ মে) বেলা ১২টার দিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গ্লোব-জনকণ্ঠের আয়োজনে দৈনিক জনকণ্ঠের শিক্ষাসাগর কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর মো. ইকরামুল হকের সভাপত্তিত্বে ও রাজশাহী স্টাফ রিপোর্টার মামুন-অর-রশিদের সঞ্চালনায় বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয়বারের মত এই আয়োজনে প্রধান অতিথি রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের প্রতিনিধি হয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল খালেক ও রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠের আলোকচিত্রী সেলিম জাহাঙ্গীর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা খুর্শিদ রাজীব প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী বলেন, সরকার নানাভাবে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে যেন শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার জন্য নানা প্রণোদনার ব্যবস্থাও আছে। দৈনিক জনকণ্ঠের এই বৃত্তি প্রদান সরকারের সেই প্রচেষ্টাকেই সহযোগিতা করছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ শিক্ষাবৃত্তির সবচেয়ে ভালো দিক হলো বাছাই প্রক্রিয়াটি। রাজশাহী জেলার নানা অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকার পিছিয়ে পড়া ও সুবিধা বঞ্চিতদেরই নির্বাচন করা হয়েছে। তাদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কল্যাণ চৌধুরী বলেন, আপনারা কষ্ট হলেও বাচ্চাদের পড়ান। আমরা যারা আজকের অবস্থানে এসেছি সেটা আমাদের পিতামাতাদের কষ্টের অবস্থান। তাদের হাতে বই তুলে দিন। আর খেয়াল রাখবেন যেন তারা ধর্মের নামে অপব্যাখ্যাকারীদের সংস্পর্ষে এসে বিপথে না যায়। বরং সত্যিকার মানুষ হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারে।

রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা বলেন, আজকে যারা জনকণ্ঠের বৃত্তি পেল তারা অনন্য সাধারণ। এরকম বৃত্তি তারা ভবিষ্যতে আরও পাবে যদি নিয়মিত পড়াশোনাটা চালিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাসহায়তা ট্রাস্টও এমন বৃত্তি দেয় যা তোমরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে পাবে। তবে ভালো ফলাফল করার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। নিয়মিত স্কুলে গিয়ে দেশপ্রেম, মানবিকতা, সুকুমারবৃত্তির বিকাশের জন্য শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনার বিকল্প নেই। কারণ একজন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শুধু পুঁথিগত বিদ্যাই নয়, জীবনের সব অভিজ্ঞতা থেকে শেখান। তাই তোমরা সবাই পড়াশোনা চালিয়ে যাবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের একেকজন স্মার্ট নাগরিক হয়ে উঠবে এটাই আমার প্রত্যাশা।

মুল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে না পারলেও রাজশাহী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসক আব্দুল খালেক অনুষ্ঠান শুরুর আগে এসে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ও সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, জনকণ্ঠের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রসংশনীয়।

দৈনিক জনকণ্ঠের শিক্ষাসাগর পাতার কো-অর্ডিনেটর ও অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রফেসর মো. ইকরামুল হক বলেন, এই বৃত্তির ফলে যদি একজনও উপকৃত হয়, তাহলেই জনকণ্ঠ তার সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গায় সার্থ। এই বৃত্তি দান কিংবা সহায়তা কোনোটাই নয়। এটা একটা উৎসাহ মাত্র। 

আপনাদের ছেলেমেয়েরা যেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে সে চেষ্টাই আমরা করছি। আগে আমরা মোবাইলে টাকা দিতাম, কিন্তু তা বাচ্চাদের হাতে পৌঁছাতো না। এখন থেকে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের হাতেই সরাসরি টাকা দিব, এর জন্য তাদের ব্যাংকে একাউন্ট করতে হবে। এই একাউন্ট কিভাবে করতে হয় সেটাও শেখার দরকার আছে। এখন থেকেই বাচ্চারা কিন্তু ব্যাংকে মানি ম্যানেজমেন্ট শিখতে পারবে।

এবার দ্বিতীয় দফার রাজশাহী জেলার ১৫ জনকে বৃত্তি প্রদান করা হলো। এরা আগামী দুই বছর (২৪ মাস) বৃত্তি পাবে। এবার রাজশাহীর বৃত্তিপ্রাপ্তরা হলো, জেলার মোহনপুর উপজেলার ম্যেগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের মোসা. মেঘলা খাতুন, বাঘা উপজেলার বাঘা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাসমুস সাকিব. মো. সামিউল আলম, চারঘাট উপজেলার বেলঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছামিয়া আকতার মেঘলা, বাঘাররহমতুল্লাহ বালিকা বিদ্যালয়ের জুলেখা খাতুন, তানোরের কচুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের যুখি হাসদা, সিয়াম ইসলাম, বহরইল বরেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের তানজিলা খাতুন, ইয়াসমিন খাতুন, দুর্গাপুর বালিকা বিদ্যালয়ের জান্নাতি শুভা, গোদাগাড়ীর নসরাত জাহান, আমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের নুহু আলম, গোদাগাড়ীর কাশিমালা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাহাদ আলী, পবার নওহাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোহনা আকতার।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সাল থেকে গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্পপরিবারের উদ্যোগে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ খান মাসুদ’ শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে আসছে। ২০২২ সালের মত এবারও রাজশাহী জেলার ১৫ জন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীকে এই বৃত্তি দেয়া হলো। 

এছাড়া পঞ্চগড়, নাটোর ও গাইবান্ধাতেও এই বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। গতবার থেকে রাজশাহীর ১৫ শিক্ষার্থী এ বৃত্তি পাচ্ছে। এবার আরো ১৫ জন যোগ হলো। এখন রাজশাহীর ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পাচ্ছে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ’ শিক্ষাবৃত্তি।
 

এমএস

×